Ajker Patrika

বর্জ্য ধ্বংসের মেশিনঅচল, বাড়ছে ঝুঁকি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৫৪
বর্জ্য ধ্বংসের মেশিনঅচল, বাড়ছে ঝুঁকি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পেছন দিকে বর্জ্য ফেলার জন্য রাখা আছে ডাস্টবিন। রোগীদের রক্ত লেগে থাকা স্যালাইন সেট, সিরিঞ্জ নিয়ে সেখানে সম্প্রতি দেখা যায় তিনজন টোকাইকে কাড়াকাড়ি করতে। তাদের পাশে কয়েকটি কুকুরও গন্ধ শুঁকে কী যেন খাচ্ছিল! মূল সড়কে মেডিকেল বর্জ্য দেখে রোগীর এক স্বজনের বক্তব্য, ‘সুস্থ মানুষও মেডিকেলে এলে অসুস্থ হয়ে যাবে।’

এক হাজার ৩১৩ শয্যার হাসপাতালের এই ডাস্টবিনে প্রতিদিন ৭ টনের বেশি বর্জ্য জমা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে জমে থাকা বর্জ্যের দুর্গন্ধে টেকা দায়। প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী আসেন হাসপাতালে। রোগীদের স্বজন, চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মী মিলে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াত এখানে। তাঁদের সকলেই আছেন সংক্রমণের ঝুঁকিতে।

অথচ ২০০২ সালে মেডিকেলের বর্জ্য ধ্বংসে ৭ কোটি টাকায় কেনা হয় দুটি ইনসাইনেরেটর মেশিন। এগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এর মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক পদে বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। এরপরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ২০ বছরেও চালু হয়নি ইনসাইনেরেটর মেশিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো চালু করা আর সম্ভব হবে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, চমেকের বর্তমান ওয়ানস্টপ সার্ভিসের পাশে দিয়ে গেছে একটি সড়ক। পূর্ববর্তী অস্থায়ী ইমারজেন্সি ওয়ার্ডের পাশেই এই কেন্দ্রীয় ডাস্টবিন। দুপুরের আগেই দেখা যায়, এই ডাস্টবিন মোটামুটি পূর্ণ। হাসপাতালের দুজন কর্মচারী সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ময়লার ঝুড়িতে করে ওই ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলছিলেন। তাঁদের ফেলা বর্জ্যের মধ্যে ছিল মানবদেহের কেটে ফেলা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিস্যু, টিউমার, রক্তে লেগে থাকা স্যালাইন সেট ও সিরিঞ্জ।

ময়লা ফেলে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দুটি কুকুর এসে রীতিমতো লড়াই বাঁধিয়ে দিল। গন্ধ শুঁকে শুঁকে মানবদেহের পরিত্যক্ত অঙ্গ মুখে নিয়ে এক কুকুর দেয় দৌড়। কাকের ঝাঁক এসে যোগ দেয় কাড়াকাড়িতে। এর মধ্যে দুই টোকাই সিরিঞ্জ ও প্লাস্টিকের বর্জ্য নিয়ে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ যেন ছোটখাটো এক যুদ্ধক্ষেত্র। পাশের দোকানদার বললেন, প্রতিদিনেরই চিত্র এটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, খোলা ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ থেকে সংক্রামক ব্যাধি বেশি ছড়ায়। যেমন টাইফয়েড, কলেরা, যক্ষ্মা, আমাশয়, ডায়রিয়া, এইচআইভি, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, জন্ডিস, নিউমোনিয়া। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আফতাব উল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন অকেজো অবস্থায় দুটি ইনসাইনেরেটর মেশিন পেয়েছি। এগুলো এখন পরিত্যক্ত। আর চালু করা সম্ভব নয়।’

আফতাব উল ইসলাম বলেন, মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসের জন্য পতেঙ্গায় একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। সেখানে বর্জ্যগুলো ধ্বংস করা হবে। ইতিমধ্যে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়েছে।

উপপরিচালক আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করাচ্ছি। তবে কিছু কিছু গাফিলতির কারণে ময়লা থেকে যায়। তবুও চমেককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত