Ajker Patrika

গোকুলচন্দ্র নাগ

সম্পাদকীয়
গোকুলচন্দ্র নাগ

চিত্রকলা, সাহিত্য, সংগীত ও অভিনয়—এই চার ক্ষেত্রে গোকুলচন্দ্র নাগের কম-বেশি চর্চা থাকলেও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘কল্লোল’ পত্রিকার জন্য।

গোকুলচন্দ্র নাগের জন্ম ১৮৯৪ সালের ২৮ জুন কলকাতায়। তাঁর পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। ছবি আঁকার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল তখন থেকে, তারই রেশ ধরে তিনি সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে পাস করে ছবি এঁকে সামান্য আয় করতে থাকেন। ১৯১৮ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে যোগ দেন, কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য কাজ ছেড়ে দিতে হয়। এরপর নিউমার্কেটে মামার একটি ফুলের দোকানে বসতে শুরু করেন। এখানেই দীনেশরঞ্জনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। গোকুলচন্দ্র, দীনেশরঞ্জন দাশ, মণীন্দ্রলাল বসু ও সুনীতি দেবীকে নিয়ে তৈরি হয় ‘ফোর আর্টস ক্লাব’। তাঁদের প্রত্যেকের একটি করে গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘ঝড়ের দোলা’ পত্রিকা।

কিছুদিনের মধ্যেই এই ক্লাবের অস্তিত্ব আর থাকে না। এরপর গোকুলচন্দ্র, দীনেশরঞ্জন মিলে নিজের টাকায় প্রকাশ করেন ‘কল্লোল’ পত্রিকা। দীনেশরঞ্জন দাশ ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক। আর সহসম্পাদক হিসেবে থাকলেও সজনীকান্তের মতে, গোকুলচন্দ্রই ছিলেন আসল কর্ণধার। লেখা জোগাড় করা, প্রুফ দেখা, প্রচ্ছদ পরিকল্পনা, চিঠিপত্র লেখা ইত্যাদি কাজে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো তাঁকেই। ১৩৩০ বঙ্গাব্দের বৈশাখে প্রকাশিত হয় পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা। চিরাচরিত গণ্ডি ও অনুশাসন উপেক্ষা করে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রকাশ ঘটে কল্লোলের হাত ধরে। এ জন্য পত্রিকাটিকে কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি।

গোকুলচন্দ্র বেঁচেছিলেন মাত্র ৩১ বছর। সাহিত্যানুরাগী হলেও খুব বেশি লেখা তিনি লিখে যেতে পারেননি। প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল।

যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯২৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ‘কল্লোল’-এর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় শোকসন্তপ্ত কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে নিয়ে লেখেন ‘গোকুল নাগ’ কবিতাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত