Ajker Patrika

কারখানার বর্জ্যে পানিদূষণ তীব্র

সবুজ সরকার, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ)
Thumbnail image

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। এই এলাকায় আশপাশে গড়ে উঠেছে সুতা রং করার প্রসেস মিল। অধিকাংশ প্রসেস মিলের পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এ কারণে মিলের রং ও বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যালের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আশপাশের ডোবা, পুকুর, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায়। এগুলো পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে ফেলা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

মিলমালিকেরা বলছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সে জন্য তাঁরা একটি স্থান নির্ধারণ করে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, এই পানি খাওয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন; বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা এই পানি পান করলে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
বেলকুচি প্রসেস মিলমালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, সমিতিভুক্ত ১৩টি কারখানা গড়ে উঠেছে উপজেলায়। কেবল এই কয়টি নিয়ম মেনে বর্জ্যনিষ্কাশন করে। এ ছাড়া আরও ২২টি কারখানা রয়েছে উপজেলায়। এসব প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন ২০০-৩০০ বান্ডিল সুতা প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, বেলকুচি উপজেলার তামাই, শাহাপুর, ক্ষিদ্রমাটিয়া, কামারপাড়া, চালা, মুকুন্দগাঁতী, শেরনগর, শ্যামগাঁতী, বওড়া, মবুপুর ও দৌলতপুরে গ্রামে প্রসেস মিলের কারখানা বেশি রয়েছে। এসব কারখানার কোনো বর্জ্যনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বর্জ্যের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে আশপাশের মানুষের বসবাসের অনুপযোগী 
হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রসেস মিলের বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এসব রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত পানি শোধন না করেই প্রসেস মিলমালিকেরা পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে ফেলছে। ফলে এ পানি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে নলকূপের পানি পান করা যায় না। পানি নীল হয়ে সাবানের ফেনার মতো বের হয়।’

আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রসেস মিলমালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কিছু বলতে পারি না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে বারবার দরখাস্ত দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।’

পৌর শেরনগর গ্রামের আজগর আলী জানান, এই প্রসেস মিলের বর্জ্যের কারণে ঘরে টিনে মরচে ধরে যায়। প্রতিবছর ঘরে টিন পাল্টাতে হয়।স্থানীয় তাঁতশিল্পের কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন, বেলকুচি তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ জনপদ এই অঞ্চলে প্রসেস কারখানায় দিনে ২০০-৩০০ বান্ডিল সুতা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ওই সুতা প্রক্রিয়াজাত করতে বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেলকুচি প্রসেস মিল মালিক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমরা এভাবেই প্রসেস মিল চালিয়ে আসছি অনেক বছর ধরে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সব প্রসেস মিলের মালিকেরা একটি স্থান নির্ধারণ করে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তাব ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।’

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, প্রসেস মিলের রঙের পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে ফেলার কারণে নলকূপের পানির সঙ্গে মিশে যায়। সেই পানি কেউ পান করলে তাঁর চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা পান করেন, তাহলে তাঁর বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম হতে পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান জানান, ‘এই উপজেলা তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। এখানে অনেক প্রসেস মিল ও সুতা রং করার কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ না পেলেও মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। আর অভিযোগের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত