Ajker Patrika

লোকসানে পড়ে পেশা বদলাচ্ছেন তাঁতিরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ২৪
লোকসানে পড়ে পেশা বদলাচ্ছেন তাঁতিরা

‘তিন দশক আগেও এই গ্রামে ছয় থেকে সাত শতাধিক তাঁতকল ছিল। বর্তমানে টিকে আছে ১৫টি। ক্রমাগত লোকসান, প্রয়োজনীয় পুঁজি আর দফায় দফায় কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁতকল। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁতিদের। যে কারণে পেশা বদল করছে অনেকেই। এক দশক আগেও আমার ১৫টি তাঁতকল ছিল, এখন আছে ৫টি।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব মো. মজিবর রহমান মুনশি। মজিবর মুনশি আরও বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা তাই ধরে রেখেছি। ১৯৪৬ সাল থেকে রামকান্তপুর ইউনিয়নে তাঁত শিল্পের শুরু হয়। কিন্তু নব্বই দশকের পর থেকে রং, সুতার দাম বাড়তে থাকে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে লোকসানের কারণে অনেকেই তাঁতকল বন্ধ করে দেয়। এখন অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ ভ্যান চালায়, কেউ অন্য ব্যবসা করছে, কেউ বিদেশ গেছে।’

মজিবর মুনশি আরও বলেন, ‘এক দশক আগে এক বেল্ট সুতার দাম ছিল ১ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই সুতা কিনতে হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। ২০১০ সালে ৪টি লুঙ্গি বিক্রি হতো ৫০০ টাকায়। সে সময় চারটি গামছা বিক্রি করে ৩০-৪০ টাকা লাভ থাকত। বর্তমানে সেখানে লাভ থাকে ১০-২০ টাকা।’

সরেজমিনে মজিবর মুনশির তাঁতকলে দেখা গেছে, দুই চালা টিনের তৈরি ঘরের মধ্যে পাঁচটি তাঁতকল রয়েছে। তিনজন শ্রমিক ভোর থেকেই খটখট শব্দে গামছা, লুঙ্গি তৈরি করেছেন। একজন চরকার সাহায্যে সুতা ছাড়িয়ে তাঁত কলে দিচ্ছেন। আরেকজন মাটির পাত্রের মধ্যে আঠা দিয়ে সুতা ভিজিয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছে।

অপরদিকে কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়নের চরসিলোকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সত্তরোর্ধ্ব আবু জাফর তাঁতযন্ত্রের পাদানিতে একবার করে পাড়া দিচ্ছিলেন আর হাতে থাকা কাচের বোতল দিয়ে বুনন করে চলা সুতার ওপর দিচ্ছিলেন চাপ। এভাবেই নিমগ্ন চিত্তে গামছা বুনছিলেন তিনি।

আবু জাফর বলেন, ‘একটি গামছা তৈরি করতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। গামছা বুনতে খরচ পড়ে প্রায় ১০০ টাকা। বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়। মাত্র ৩০ টাকা লাভের জন্য এভাবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য কোনোরকমে ধরে আছি।’

একই গ্রামের ছবেলা বেগম বলেন, ‘আগে যে কাজ করেছি তা দিয়ে সংসারটা ভালো মতো চলতো। সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ হয় না, সংসার চলে না তাই বাদ দিয়ে দিছি। এখন বাড়ির কর্তা কৃষিকাজ করছে।’

রাজবাড়ী জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরো অফিসের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি অনুযায়ী এই জেলায় বর্তমানে তাঁতির সংখ্যা আছে ৩ হাজার ৪৮৮ জন। তাঁত প্রতিষ্ঠান আছে ১ হাজার ২৬৬টি। তাঁতকল আছে ২ হাজার ২১৫টি। সচল তাঁতকল আছে ১ হাজার ৫০৮টি, অচল তাঁতকল আছে ৭০৭টি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মার্জিয়া সুলতানা বলেন, ‘সদর উপজেলা থেকে তাঁতি পরিবারের সংখ্যা কমছে কি না সেটা জানা নেই। দ্রুতই রামকান্তপুর ইউনিয়নের তাঁতি পাড়া পরিদর্শনে যাব। তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলব, কেন তাঁরা তাঁতকল বন্ধ করে দিচ্ছেন।’

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. সজীব বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। তাঁতিদের বিষয়ে আপনার কাছ থেকে জানলাম। খোঁজখবর নেব এ বিষয়ে। তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত