Ajker Patrika

ভাঙা ঢাকায় রাতের বেলা দিনের নিয়ম

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ০৭
ভাঙা ঢাকায়  রাতের বেলা  দিনের নিয়ম

ঘর যদি দক্ষিণ দুয়ারি হয় তাহলে দিনের বেলা সূর্যের আলো পাবেন। উত্তর দুয়ারি ভুগবে আলোকস্বল্পতায়। ঢাকার এক উড়ালসড়কের ভাগ্যেও যেন তেমন পরিহাস। তবে তার ক্ষেত্রে দিনে নয়, রাতে ঘটছে এমনটা। দক্ষিণ অংশে রাতে চকচকে আলো, উত্তরের অংশ তখন ডুবে থাকে প্রায় অন্ধকারে।

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের দুর্দশার কারণ আর কিছু নয়, উত্তর-দক্ষিণে ভাগাভাগির ফল। ঢাকায় এখন দুটি সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। উড়ালসড়কটির দুই অংশ দুই সিটির অধীন। ফলে দেখভালও হয় আলাদাভাবে। অনেক দিন প্রায় অন্ধকারে থাকার পর সম্প্রতি দক্ষিণের অংশে চকচকে এলইডি সড়কবাতি বসেছে। কিন্তু আগের মতো অন্ধকারে রয়ে গেছে উড়ালসড়কের উত্তরের অংশ। সেখানে যে কয়েকটি বাতি জ্বলছে, তা লালচে নিয়ন আলো। তাও বেশির ভাগ অকেজো।

এক অংশে লালচে নিয়ন আলো, অন্য পাশে এলইডি লাইটের ঝলমলে আলো। একই স্থাপনার দুই রকম পরিস্থিতিকে সমন্বয়হীনতার খারাপ দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসি সম্প্রতি উড়ালসড়কের দক্ষিণ অংশে ডিজিটালাইজড স্মার্ট এলইডি বাতি লাগিয়েছে। ১৫০ ওয়াট ক্ষমতার এই বাতির সংখ্যা ৪৯০টি। বাতিগুলো অনলাইনে কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাতে ও দিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিগুলো জ্বলে ও নেভে। বাতিগুলো লাগানো হয়েছে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মোড় থেকে মগবাজারের চৌরাস্তা পর্যন্ত, শান্তিনগর (কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি) থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত, রাজারবাগ থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রায় সোয়া ছয় কিলোমিটারে ঝলমলে আলো।

এদিকে ডিএনসিসির মধ্যে পড়েছে উড়ালসড়কটির প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ। মগবাজার থেকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত এবং মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেলে পর্যন্ত অংশ উত্তর সিটিতে। এ অংশে বাতির প্রয়োজন ১০৩টি। সেখানে এখনো নিয়ন বাতি লাগানো। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিকল। শান্তিনগর থেকে আবুল হোটেল হয়ে নিয়মিত অফিস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে তো পুরো ফ্লাইওভার অন্ধকারে ছিল। এখন শান্তিনগর থেকে উঠলে কিছু অংশে আলো পাই। মালিবাগ রেলগেট থেকে অন্ধকার থাকে ফ্লাইওভারের বাকি অংশ। একই ফ্লাইওভারে দুই রকম চিত্র। দেশটা বড় অদ্ভুত।’

উড়ালসড়কের আবুল হোটেলের অংশটি পড়েছে ডিএনসিসির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত কিছু বাতি জ্বলে না এটা সত্য। ফ্লাইওভারে দুই সিটি সমন্বয় করে উন্নয়নে করলে ভালো হতো।’ মগবাজারের ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক ফ্লাইওভারের দুই রকম বাতি দেখতে ভালোই লাগে। তবে কিছু অংশে বাতি না থাকায় মাঝেমধ্যে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা জানতাম উড়ালসড়কের উত্তরের অংশের লাইটগুলো ঠিক আছে। খোঁজখবর নিয়ে যেসব লাইট অকেজো হয়ে গেছে, তা পাল্টিয়ে নতুন লাইট লাগানোর ব্যবস্থা করব।’ দুই সিটির সমন্বয়হীনতা আছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এখানে সমন্বয়হীনতার কিছু নেই, ঢাকা সিটি দুই ভাগ হয়ে গেছে। আমরা দক্ষিণে আছি, চাইলে উত্তরে কাজ করতে পারব না।

উত্তর সিটিকেও আমরা বলেছি লাইট লাগানোর বিষয়ে। তারা নতুন লাইট লাগালে আরও সুন্দর হতো।’ এক উড়ালসড়কে দুই রকম চিত্র, দুই সিটির সমন্বয়হীনতার নজির বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকাকে দুই ভাগ করার সময় সেবার সহজলভ্যতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। এখন হয়েছে উল্টো। নগরীকে দ্বিখণ্ডিত করলে কী হতে পারে, তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে এই ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত