Ajker Patrika

কান্না থামেনি শিউলির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৪
কান্না থামেনি শিউলির

ভালোই চলছিল তাঁদের জীবন। বাসচালক স্বামী মিজান যা আয় করতেন, সেটা দিয়েই সুখের দিন যাচ্ছিল শিউলির। ঢাকায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতেন তাঁরা। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারান শিউলি। এরপর থেকে সন্তান নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। একটি সড়ক দুর্ঘটনা তাঁর জীবনকে কোথায় নিয়ে এসেছে, সেটা ভেবেই থেকে থেকে কেঁদে ওঠেন শিউলি।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারানো শিউলি আক্তার। অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো ৫০টি পরিবারকে সেলাই মেশিন প্রদান করে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।

শিউলি জানান, মিটফোর্ডে কাজে যোগ দিতে তাঁর স্বামী বাসা থেকে বের হন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর খবর আসে তাঁর স্বামী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। স্বামীর সঙ্গে আর কথা হলো না তাঁর। ডাক্তার জানিয়ে দিলেন, মিজান আর বেঁচে নেই।

শিউলি বলেন, ‘আমার স্বামী সেদিন যাত্রী হয়ে বাসে উঠেছিলেন, উল্টো পথ থেকে আসা দুটি বাসের ধাক্কায় তাঁর মাথায় বাসের জানালার কাচ ঢুকে যায়।’

দুর্ঘটনার পর কারও কোনো সহযোগিতা পাননি জানিয়ে শিউলি বলেন, ‘অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ সাহায্য করেনি। তিন সন্তান নিয়ে কীভাবে কষ্টে দিন কাটিয়েছি, তা আল্লাহই ভালো জানেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাই। দুর্ঘটনার পর সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, যারা মারা গেছে ২০ হাজার টাকা করে দেবে। একটা জীবনের মূল্য মাত্র ২০ হাজার! আমার বাচ্চারা প্রায়ই বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে, আহাজারি করে। আমি বিধবা হয়েছি, বাচ্চারা এতিম হয়েছে। অথচ আমাদের পাশে তখন কাউকে পাইনি।’ সেলাই মেশিন পেয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনকে ধন্যবাদ দেন শিউলি আক্তার।

দুর্ঘটনায় স্বজন চলে যাওয়া কতটা কষ্টের, সেটা যার গেছে সেই বোঝে—এমনটি বলছিল জান্নাতুল মাওয়া নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে সে। সড়ক দুর্ঘটনায় পরপারে গেছেন বাবাও। মাওয়া বলে, ‘অভাব নিয়েও অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি আমি।’

ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন মুক্তি বেগম। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মুক্তির স্বামী। সেলাই মেশিন নিতে মুক্তির সঙ্গে অনুষ্ঠানে এসেছিল তাঁর ছোট ছেলেও। এ সময় বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মুক্তি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘স্বামী হারিয়েছি আমি। এখন বাচ্চাকে মানুষ করতে চাই। সবাই একটু আমাদের পাশে দাঁড়ান।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা চাই সড়ক দুর্ঘটনায় একটা মানুষও যেন মারা না যান। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত সড়কে আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে। আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা কমাতে না পারলে নিরাপদ সড়কের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। নিরাপদ সড়কের জন্য শতাধিক সুপারিশ এসেছিল। এসব নিয়ে আমরা সভা করেছি। কিন্তু এগুলো এত দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনে হাফ ভাড়ার পাশাপাশি পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের সন্তানদের পড়ালেখা অবৈতনিক করা হোক। পরিবহন শ্রমিকেরা তাহলে তাদের সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয় থেকে রেহাই পাবেন। কারণ সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় মেটাতে গিয়ে তাঁদের আর্থিক টানাপড়েনে পড়তে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত