Ajker Patrika

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আরাফাত রহমান, শেকৃবি
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২৯
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে তিন বছর ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গত তিন বছরে এই দুই গ্রুপের ৩৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কখনোই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে নবীন শিক্ষার্থীদের দলে টানার এ লড়াই যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। এ বছর ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও এমন সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তর, দক্ষিণ, পাবনা-সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও কুমিল্লা এই ছয়টি আঞ্চলিক গ্রুপ রয়েছে। ক্যাম্পাসে এসব অঞ্চল ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিত। এসব গ্রুপের প্রধান কাজ প্রভাব বিস্তার করা। গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রতিবছর স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তির সময় লোকবল বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গ্রুপে সংযুক্ত করেন। মূলত শিক্ষার্থীদের দাদার বাড়ি ও বর্তমান ঠিকানার ভিত্তিতে তাদের নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। লিখিত কোনো বিধান না থাকলেও এসব আঞ্চলিক গ্রুপের নেতা-কর্মীরাই নতুন শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সিট বণ্টন করেন। এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভর্তি হতে আসা কোনো শিক্ষার্থীর দাদার বাড়ি ও বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন হলে ওই শিক্ষার্থীকে কারা দলে ভেড়াবেন এ নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। অঞ্চল বড় হওয়ায় ঢাকা ও কুমিল্লা বাদে অন্যান্য অঞ্চলের

নেতা-কর্মীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থী পেয়ে যান। ফলে নবীন শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রতিবার সংঘর্ষ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত তিন বছরে এসব সংঘর্ষে এই দুই গ্রুপের ৩৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৯ সালের সংঘর্ষে ১৩ জন, ২০১৮ সালে নয়জন এবং ২০১৭ সালে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এসব সংঘর্ষে বিভিন্ন সময় আবাসিক হলের কক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সম্পদ ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে প্রতিবছরই সংঘর্ষের মাত্রা বাড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী হুমায়ূন কবির বলেন, ‘ভর্তির দিন এ ধরনের সংঘর্ষের ফলে ক্যাম্পাস সম্বন্ধে সবার মধ্যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকেরা সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান না। কাজেই নবীন শিক্ষার্থীদের দলে টানার এই লড়াই থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হারুন-উর-রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার ভর্তির দিন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যারা বিঘ্নিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত