Ajker Patrika

ঘুষের স্বীকারোক্তি দিয়ে স্ট্যাম্পে সই অধ্যক্ষের

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
ঘুষের স্বীকারোক্তি দিয়ে স্ট্যাম্পে সই অধ্যক্ষের

একাধিক তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এলেও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিপাকে পড়েছেন তিনি ও তাঁর সঙ্গী এক সহকারী অধ্যাপক। বেকায়দায় পড়ে তাঁরা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আগামী নভেম্বরের মধ্যে সহকারী লাইব্রেরিয়ানের চাকরি এমপিওভুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। জামানত হিসেবে জমা দিয়েছেন ব্যাংক চেক। 

অভিযুক্ত দুজন হলেন সিলেটের জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালে কলেজে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় হরিপুর এলাকার হেমু মাঝপাড়ার মৃত আবদুল হামিদের মেয়ে সাফিয়া বেগমকে। তাঁর চাকরি স্থায়ীকরণ ও এমপিওভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে মোট ৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ নেন মফিজুর ও শফিকুল। কিন্তু এত দিনেও এমপিওভুক্ত করতে ব্যর্থ হন তাঁরা। এ নিয়ে ২৪ আগস্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ কামরুল আহমদসহ পাঁচ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যস্থতায় সালিস বৈঠকে তাঁরা এসব স্বীকার করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মফিজুর ও শফিকুল নভেম্বর পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এমপিওভুক্ত না হলে সালিসকারীরা চেক নগদায়নসহ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। কলেজের অফিস সহকারী ও সাফিয়ার বোন ফাতিমা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এমপিওর জন্য টাকা নেওয়া হয়েছিল।’ 

এর আগে কলেজের দুই প্রভাষকের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে ২০১৯ সালে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ২০২২ সালে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, ৫ লাখ টাকা এবং এক বছরের বেতনের ফাঁকা চেকে লিটন কান্তি রায় এবং ৩ লাখ টাকা ও স্যালারি অ্যাকাউন্টের ফাঁকা চেকের বিনিময়ে মো. শাহজাহানের নিয়োগ বৈধ প্রক্রিয়ায় হয়নি। এতে জড়িত অধ্যক্ষ মফিজুর ও সহকারী অধ্যাপক শফিকুলের বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

তারও আগে ২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ মফিজুরের নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকে এমপিও বাবদ উত্তোলিত সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পরে মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্দেশনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। গত ১৯ বছরে মাত্র একবার অভ্যন্তরীণ অডিটে নানা আর্থিক অনিয়ম ফুটে ওঠে। 

তা ছাড়া ২০২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল অধ্যক্ষ মফিজুরের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন। পরে মাউশির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে। 

তবে যোগাযোগ করা হলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন অধ্যক্ষ মফিজুর। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন, নিরীক্ষা টিমের প্রতিবেদনসহ সব অভিযোগ ২০১৮ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে।’

এমপিওভুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘শফিকুলকে এমপিওভুক্ত করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এমপিওর জন্য শিক্ষা অফিসে টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি অবগত ছিলাম।’

জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক শফিকুল বলেন, ‘আমার তো চাকরি দেওয়ার সিগনেটরি পাওয়ার নেই। অধ্যক্ষ চুক্তি করে টাকা নিয়েছে। এমপিও হয়নি। পরে আমাকে ধরলে চেষ্টা করেছি। শিক্ষা অফিসে কিছু দিয়েছিও। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রশীদ হেলালীর সময়ে আমি, অধ্যক্ষসহ সব নিয়োগ ভুয়া। এটা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

চীনা পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে কমিয়ে সুখে বসবাসের ঘোষণা ট্রাম্পের

২৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪১৪ কোটি টাকার অনিয়ম

কাশ্মীরে হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ না হলে মানবজাতির সামনে ‘চরম অন্ধকার’, ভ্যান্সের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত