Ajker Patrika

অল্প বৃষ্টিতেই কোমর পানি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
অল্প বৃষ্টিতেই কোমর পানি

নগরের বাকলিয়া থানার সৈয়দশাহ রোড এলাকায় সড়কে কোমর সমান পানি। সড়কটি কতটুকু উঁচু করা হয়েছে পাশের বাড়িগুলো দেখলে তা বোঝা যায়। অর্থাৎ প্রতিটি বাড়ির নিচতলার চেয়ে সড়কগুলো ওপরে। ফলে স্বভাবতই মূল সড়কে কোমর সমান পানি মানে বাসায় টইটম্বুর। তাই এসব বাসায় যাঁরা থাকেন, বৃষ্টি হলেই শঙ্কায় থাকেন তাঁরা। সেখানে থাকা নাজমা বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘গরমে পরান যাইলে কী হইব, ঝড় আইলে ডর লাগে।’

নাজমা বেগমের এ শঙ্কার কারণ, চট্টগ্রামে অল্প বৃষ্টিতেই বাসায় পানি ঢুকে যায়। এতে আসবাবপত্রের পাশাপাশি নির্ঘুম রাত কাটে তাঁদের। গতকাল শনিবার সরেজমিন যখন নাজমার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তাদের শোয়ার খাট পানিতে ভাসছে। বিছানাপত্র কিছু আলমারির ওপর আর কিছু সানশেডে। সকাল থেকে বাসায় রান্নাবান্না হয়নি। দুপুরে সবাই মিলে হোটেলে গিয়ে খেয়েছেন বলে জানান।

শুধু নাজমা বেগম নন, চকবাজার হয়ে কেবি আমান আলী রোড থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকের নিচতলা ডুবে গেছে। বড়মিয়া মসজিদেও নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় মুসল্লিরা ওপরতলায় নামাজ আদায় করেন।

চট্টগ্রামে গতকাল মাত্র ৩ ঘণ্টা বৃষ্টিতে এই অবস্থা। তাও মাত্র ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি। কেবি আমান আলী রোড ছাড়াও চট্টগ্রাম দুই নম্বর গেট, বাদুরতলা, জঙ্গী শাহ মাজার গেট, হারেজ শাহ মাজার গেট, বড় গ্যারেজ, ডিসি সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সব জায়গায় হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার বাসা-দোকানেও ঢুকে পড়ে পানি। নালা আটকে থাকায় বিভিন্ন উঁচু এলাকার সড়কেও পানি জমতে দেখা গেছে। ফলে বর্ষার আগেই অনিয়মিত এই বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। পরবর্তী সময়ে সকাল ৯টা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির আগে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায় বলে জানান তিনি।

বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, আজকের তিন ঘণ্টার বৃষ্টি হলো অনিয়মিত বৃষ্টি। আগামীকালও (আজ) এমন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সিডিএর একটি চুক্তি হয়েছিল, বর্ষার আগে চাক্তাই খাল, মির্জা খাল, টেকপাড়া খালসহ আরও কয়েকটি খালের বাঁধ তারা খুলে দেবে। কিন্তু সেগুলো এখনো খুলে না দেওয়ায় সামন্য বৃষ্টিতে পানি জমে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যদিও এখন বর্ষাকাল নয়, আশা করি তারা বর্ষার আগেই বাঁধগুলো খুলে দেবে।

প্রতিবারের মতো এবারের বর্ষায়ও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই মিলছে না চট্টগ্রামবাসীর। বিগত বছরগুলোর তুলনায় আরও বেশি জলাবদ্ধতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছে নগরবাসী। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কাজ চলমান থাকা খালগুলোতে বাঁধের কারণে এবার জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বাড়বে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে খালের ওপর দেওয়া বাঁধগুলো অপসারণ করতে বলা হলেও এখনো অনেক বাঁধ রয়ে গেছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরে হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত