Ajker Patrika

পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলার যে কারণে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৬: ৪২
পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলার যে কারণে

পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে শুধু যোগাযোগের বিষয়টি মাথায় রাখলেই হয়নি। সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হয়েছে আরও অনেক কিছু। প্রমত্তা পদ্মার স্রোতকে যথাসম্ভব বাধাগ্রস্ত না করা, সেতু এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বিশেষত ইলিশের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছে। আর এ কারণেই এত দীর্ঘ একটি সেতুকে মাত্র ৪২টি পিলার বা পিয়ারের ওপর দাঁড় করাতে হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সামনে ছিল যমুনার ওপর থাকা বঙ্গবন্ধু সেতুর অভিজ্ঞতা। যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার হলেও এতে রয়েছে ৫০টি পিলার। এই পিলারগুলো সেতুটিকে পোক্ত করলেও নদীর ওপর পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে এর স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে সেতু এলাকায় পড়েছে একের পর এক চর।

পদ্মা আবার অন্য কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, ইলিশ। পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা পর্যায় থেকে শুরু করে পুরো নির্মাণকাল এই ইলিশের বিষয়টি বিশেষভাবে মাথায় রাখা হয়েছে। ইলিশ যেন পদ্মাবিমুখ না হয়, সে জন্য ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা। কেনই-বা সতর্ক হবে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী একক ফসল হিসেবে ইলিশ থেকেই আসে মোট দেশজ উৎপাদনের ১ শতাংশ। ফলে স্বাদ তো বটেই, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করেও ইলিশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পানিপ্রবাহ সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় নির্বাধ রাখার চেষ্টা এ কারণেও করা হয়েছে।

স্বাভাবিক কারণেই পদ্মার ক্ষেত্রে সেতু নির্মাণের ফলে এমন বিরূপ প্রভাব পড়ুক, তা কেউ চায়নি। ফলে নদীর স্বাভাবিক স্রোতকে যতটা সম্ভব অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাবেক প্রধান প্রয়াত অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোত পদ্মায় প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। এত পানির প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। সেতুর বয়সকাল ১০০ বছর ধরা হলেও আরও দীর্ঘ সময় এটি টিকে থাকবে—এমনটাই প্রত্যাশা। সেতুর নিচে ভরা মৌসুমে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটিই ছিল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আর সে কারণেই একেকটি পিলারের মাঝখানে গড়ে ১৫০ মিটার দূরত্ব রাখা হয়েছে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

পিলারগুলোর মধ্যে থাকা এই দূরত্ব এবং পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্যের হিসাব নদীর পানিপ্রবাহের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। জামিলুর রেজা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, যমুনা সেতুতে নদীর পানির প্রবাহ যতটা আটকে দেওয়া হয়েছে, পদ্মা সেতুতে প্রবাহ তার চেয়ে অনেক কম বাধাগ্রস্ত হবে। যমুনায় ভরা মৌসুমে নদী বিস্তৃত হতো ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা আটকে দিয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার সেতু দিয়ে বন্ধন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পদ্মার যে এলাকা দিয়ে সেতু তৈরি হচ্ছে, সেখানে ভরা মৌসুমে নদীর বিস্তৃতি ১০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। পানির প্রবাহ যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে জন্য এই সেতু টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত