Ajker Patrika

রমজানে দুধ বিলান তাঁরা

আকতার হোসেন বকুল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট)
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ১০
রমজানে দুধ বিলান তাঁরা

পবিত্র রমজান এলেই গরিব ও অসহায়দের নিজ খামারের গাভির দুধ বিতরণ করেন তাঁরা। এমনকি যাঁরা নিয়মিত বাড়ি এসে দুধ কিনতেন, তাঁদেরও এ সময় বিনা মূল্যে দুধ দিচ্ছেন তাঁরা। প্রতিবছর প্রথম রমজান থেকেই এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর (নদীর ধার) গ্রামের আব্দুল জলিল প্রামাণিক-রাবেয়া আক্তার দম্পতি।

রমজান মাসের শুরুতেই তাঁরা এলাকার গরিব, অসহায়, বিধবা ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের মাঝে বিনা মূল্যে খামারের গাভির দুধ বিতরণ করেন। অর্থের অভাবে যাঁরা ভালো কিছু খেয়ে রোজা রাখতে পারেন না, বিশেষ করে তাঁদের জন্য এ ব্যবস্থা করেছেন এই দম্পতি। রোজার শেষ দিন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে জানান তাঁরা। এই দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে যাঁরা রোজা থাকছেন, আর তাঁদের জন্য দোয়া করছেন—এটাই বড় পাওয়া বলে জানান তাঁরা।

গ্রামের হামিদা বেওয়া। বয়স ষাটোর্ধ্ব। স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। একমাত্র ছেলে, সে-ও বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মায়ের খোঁজখবর রাখেন না। হামিদা বেওয়া ভিক্ষাবৃত্তি করে একাই সংসার চালান।

জলিলের বাড়ি থেকে আধা লিটারের একটু কম দুধ প্লাস্টিকের মগে দুধ নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে বাড়ি ফিরছেন, আর বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন। দুধ কোথায় পেলেন জানতে চাইলে হামিদা বেওয়া বলেন, ‘জলিলের বউ দিয়েছে। এই দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা থাকব। আল্লাহ যেন তাঁর ভালো করে।’

একই বয়সের বিধবা মনোয়ারা। হাতে ছোট জগে দুধ নিচ্ছেন জলিলের বউয়ের কাছ থেকে। কত টাকার দুধ নিলেন জানতে চাইলে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি দুধ কিনে খাওয়ার টাকা পাব কোথায়। রোজার প্রথম দিন থেকে জলিলের বউ দুধ দেয়, টাকা নেয় না। এই দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা থাকি।’

এ বিষয়ে উপজেলার রতনপুর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার খামারে পাঁচটি বিদেশি জাতের গাভি আছে। এগুলোর মধ্যে দুটি গাভির দুধ হয় না। দুটি মা হতে চলেছে। অল্প দুধ হয়, আর একটি দুধ ভালো দেয়। প্রতিদিন ২০-২৫ লিটার দুধ হয়। এর মধ্যে কিছুটা আমাদের নিজের জন্য রাখি, বাকিটা প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী যাঁরা দুধ কিনতেন এবং যাঁরা টাকার অভাবে কিনতে পারেন না, রোজার প্রথম দিন থেকে টাকা ছাড়াই তাঁদের দুধ দিচ্ছি।’ স্বল্প সুদে সরকারিভাবে যদি ঋণ পেতাম, তবে খামারটা বড় করতেন বলেও জানান তিনি।

জলিলের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, প্রতিদিন গাভির খাওয়া খরচ দুধ বিক্রির টাকায় চলত। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রোজার মাসে কারও কাছ থেকে টাকা নেব না। তাই সবাইকে প্রতিদিন গড়ে ২০ লিটার দুধ বিনা মূল্যে দিচ্ছি।’

স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. হাছিবুল আলম বলেন, ‘রোজাদারদের জন্য এই পরিবার যে কাজ করছে, নিঃসন্দেহে এটা আখিরাতের জন্য উত্তম কাজ। এমন কার্যক্রমে সমাজের সব বিত্তবানকে এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত