Ajker Patrika

‘ঝামেলা করলে হয়রানি বাড়বে দাদা, আগে পার হয়ে নিই’

আবু ইউসুফ মিন্টু, পরশুরাম (ফেনী) 
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৩: ১৯
‘ঝামেলা করলে হয়রানি বাড়বে দাদা, আগে পার হয়ে নিই’

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেপাল চন্দ্র ভৌমিক। পূজা উপলক্ষে ভারতের ত্রিপুরায় যাচ্ছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি। ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার জন্য এসেছেন পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে। বন্দরের শুল্ক স্টেশন কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পার করে দিয়েছেন কয়েক ঘণ্টা। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা একটু পরপর কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকছেন, আবার বেরিয়ে এসে নিজেরা কথাবার্তা বলছেন। বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা ঝামেলায় পড়েছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে এগিয়ে গেলে নেপাল চন্দ্রের কণ্ঠে যেন অনুনয়ের সুর! ‘দাদা, আগে বাংলাদেশের অংশটুকু পার হয়ে যাই। এখন যদি এসব নিয়ে ঝামেলা করেন, তাহলে আমাদের আরও বেশি হয়রানি করবে।’ পরে তিনি জানান, শুল্ক স্টেশনে জনপ্রতি তাঁদের কাছ পাঁচ শ টাকা অতিরিক্ত দাবি করা হয়েছিল। অনেক ঠেলাঠেলির পর শেষমেশ তিন শ টাকা করে দিয়ে পার পেয়েছেন।

বিলোনিয়া স্থলবন্দরে বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশে দুই দেশের যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। একসময় এ পথে অনেক মানুষ যাতায়াত করলেও হয়রানি-ভোগান্তিতে এখন সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

জানতে চাইলে বিলোনিয়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আল আমিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার-নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর বাইরে আমার কার্যালয়ের কোনো কর্মী বা কর্মকর্তা টাকা নেন কি না আমি জানি না।’

কর্মকর্তা না জানলেও সম্প্রতি এই স্থলবন্দরে সরেজমিনে দেখা গেছে যাত্রী হেনস্তার চিত্র। যাত্রীদের অভিযোগ, বিজিবির চেকপোস্ট, শুল্ক স্টেশন ও পুলিশ ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের গতি কমিয়ে দেন। এরপর তাঁরা টাকা দাবি করেন। না দিলে শুরু হয় হয়রানি।

পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাত্রা বিলম্বিত হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাংলাদেশের সীমান্ত পথ পেরিয়ে ভারতের অংশে শুরু হয় বিএসএফের নানা অজুহাতে হয়রানি।

মো. ইব্রাহিম হোসেন নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরতরা তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। না দেওয়ায় তাঁরা দীর্ঘক্ষণ তাঁকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখেন। যাত্রীদের প্রতিবাদ করারও সুযোগ নেই। প্রতিবাদ করলে যাত্রা আরও বিলম্বিত হয়। পরে ফেরার সময় কিংবা দ্বিতীয় দফায় যাওয়ার সময় হয়রানি আরও বেড়ে যায়।

পরশুরাম বাজারের উপজেলা সড়কের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকবাল হোসেনের অভিযোগ, তিনি কয়েকবার এই স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত করার সময় হয়রানির শিকার হয়েছেন। শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তা সরাসরি তাঁর কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এই পথে যাত্রীরা নানা রকমের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। একসময় এই বন্দর খুবই জমজমাট ছিল। কিন্তু এখন হয়রানির কারণে দিন দিন যাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

বিলোনিয়া লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন জানান, প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে তিন শ থেকে পাঁচশ টাকা আদায় করার অভিযোগ প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মান্নান বলেন, বিলোনিয়া সীমান্তে এভাবে যাত্রী হয়রানি চললে দুই দেশের যাত্রী চলাচল একেবারে কমে যাবে। যাত্রীরা এই স্থলবন্দর ছেড়ে বিকল্প পথে যাতায়াত শুরু করবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফেনীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

তবে স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তাকবির আহাম্মদের দাবি, টাকার জন্য যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ সত্য নয়।

আর মজুমদার হাট বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মুনিরুজ্জামানও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, বিজিবির কোনো সদস্য কোনো যাত্রীকে হয়রানি করেন না।

জানতে চাইলে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত