Ajker Patrika

ধান কাটার মৌসুমে জমে উঠেছে শ্রম বিক্রির হাট

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৫: ৫৭
ধান কাটার মৌসুমে জমে উঠেছে শ্রম বিক্রির হাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল বাজারে বোরো ধান কাটা মৌসুম উপলক্ষে জমে উঠেছে শ্রম বিক্রির হাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটার কাজ পেতে এই শ্রম বাজারে আসেন শ্রমিকেরা। প্রায় ৫০ বছর ধরে বসে শ্রম বিক্রির এই বিশাল হাট উপজেলার অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ রোডে বসে।

গতকাল বুধবার ভোরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মূলত ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার লোকজন এখানে এসেছেন কাজের খোঁজে। এক বেলার জন্য বা কয়েকদিনের জন্য তারা শ্রম বিক্রি করেন এই বাজারে। সারা দিন কাজ শেষে বিভিন্ন জেলার শ্রমিকেরা স্থানীয় স্কুল-কলেজের বারান্দায় রাত্রি যাপন করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফজরের আজানের পর থেকেই শ্রমিকেরা জড়ো হতে শুরু করেন। প্রতিদিন উপজেলার পাকশিমুল, অরুয়াইল,চাতলপাড় ও চুন্টা ইউনিয়ন থেকে লোকজন শ্রম কিনতে আসে। হাটে ওঠা পণ্যের মত এখানেও চলে দরদাম। এসব শ্রমিকেরা এক দিনের শ্রমের মূল্য হাঁকেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ টাকা পর্যন্ত।

হাটে কথা হয় নেত্রকোনা জেলা থেকে আসা শ্রমিক মোকতার আলীর (৫২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজ জেলায় কাজ নেই। ছয় সদস্যের পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ অঞ্চলে শ্রমের দাম বেশী, কাজও বেশী। তা ছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে চলে আসি।’

কিশোরগঞ্জের ফজর আলীর (৪৬) বলেন, ‘মহাজনেরা আমাদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। কাজে একটুও বিশ্রাম দিতে চায় না।’

তবে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের অভিযোগও কম নয়। সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের জাহের আলী (৫০) বলেন, ‘এখানকার শ্রমিকেরা সাহেবদের মত। ঘড়ি ধরে কাজ করেন। এদের বেশি কিছু বলা যায় না। কিছু বললেই কাজ ফেলে চলে যায়।’

শ্রমিক নিতে আসা অরুয়াইল ইউনিয়নের শাহাজ উদ্দিন বলেন, ‘ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিতে এসেছিলাম। আবহাওয়া খারাপ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। বৃষ্টিতে তো শ্রমিকেরা ধান কাটতে পারবেন না। তবে আজকে শ্রমিকের দাম কম। ৯ শ টাকা মাত্র। গত দুই দিন আগে ছিল ১৩০০ টাকা। বৃষ্টির কারণে শ্রমিকের দাম কমেছে।’

এই বাজার নিয়ে কথা হয় স্থানীয় প্রফুল্ল দাসের (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে কলেজ ছিল না। কাঠের একটা সেতু ছিল এখানে। এই সেতুর নিচে আমরা মাথায় গামছা বেঁধে কাঁচি, ধানের আঁটি বহনকারী বাঁশের ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। খেত মালিকেরা এসে ধান কাটার জন্য আমাদের নিয়ে যেতো। মজুরি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ভোর থেকে রাত ৮ থেকে ৯ টা পর্যন্ত কাজ করতাম।’

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেক পুরনো এই শ্রম বাজার। এখানে যারা বিভিন্ন জেলা থেকে কাজ করতে আসেন তাঁদের শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের এলাকার মানুষ খুব দরদি মনের। বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচার-আচরণ করেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত