Ajker Patrika

তীর রক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ, থামছে না মেঘনার ভাঙন

মো. ইব্রাহিম, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
তীর রক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ, থামছে না মেঘনার ভাঙন

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। একে একে নদীপারের পরিবারগুলোর বাড়িঘর ও কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় তা সম্পন্ন হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হচ্ছে নদীতে।

এ বছর বর্ষার শুরু থেকে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নদীপারের একের পর এক বসতভিটা বিলীন হয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। তিন যুগ ধরে টেকসই বাঁধ না থাকায় ৩১  কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কমলনগরের চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ বাজারটি। গত কয়েক বছরে ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কাদির পণ্ডিতের হাট, লুধুয়া বাজার, বাঘা বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময়ে ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প নিলেও তা কোনো কাজে আসেনি।

জানা গেছে, গত বছরের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী, লুধুয়া বাজার ও কাদির পণ্ডিতের হাট এলাকা রক্ষায় মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ৩১ কিলোমিটার প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একই বছরের আগস্টে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়।

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তারপর থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া বালুর সংকট দেখিয়ে তিন মাস কাজ বন্ধ রেখেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বালুর সংকট দূর করে জুনের শুরুতে আবারও বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এরপর তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। তবে মেঘনার ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না।

কালকিনি ইউনিয়নের বাসিন্দা হারুন ডিলার বলেন, মেঘনার ভাঙনে উপজেলার চরমার্টিন, চৌধুরী বাজার, নাছিরগঞ্জ বাজার, চরজগবন্ধু, চরফলকন, লুধুয়া ও চরকালকিনি ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানালে বাঁধ অনুমোদিত হয়। তবে বারবার কাজ বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন নতুন করে কোনো না কোনো এলাকা নদীতে বিলীন হচ্ছে।

চরকালকিনি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়ার আহমেদ পাটোয়ারী ৪ হাজার ৮০০ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। মেঘনার ভাঙনে সবই হারিয়েছেন। এখন তিনি থাকেন অন্যের জমিতে। তাঁর দাবি, মৃত্যুর আগে যেন বাঁধটি দেখে যেতে পারেন।

কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘জোয়ারে আমার মায়ের কবরে পানি ওঠে। এটি দেখলে কলিজা ফেটে যায়। এ জন্য নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে আমরা মহান আল্লাহর কাছে হাত তুলেছি।’

চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ বলেন, কমলনগরের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা মেঘনার ভাঙন। এই ভাঙন রোধ এবং সমস্যার সমাধান করা না গেলে মানচিত্র থেকে এলাকাটি বিলীন হয়ে যাবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, বালুর সংকট ও বরাদ্দের টাকা ছাড় না হওয়ায় দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। বরাদ্দটি ‘সি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আনা হয়েছে। এখন টাকা পাওয়া যাবে। শিগগির আবার কাজ শুরু হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত