Ajker Patrika

সুখের কুঠিরের পোড়া ছাই হাতে কাঁদছেন সুফলারা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ ও এম মেহেদী হাসিন, রংপুর
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫৪
সুখের কুঠিরের পোড়া ছাই  হাতে কাঁদছেন সুফলারা

একদিকে ঘর পোড়া মাটির গন্ধ, অন্যদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। ঘরহীন মানুষেরা কেউ মন্দিরে কেউবা তাঁবুতে নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছেন। রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া বড় করিমপুর এলাকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গত রোববার রাতে উত্তেজিত জনতার দেওয়া আগুনে বাড়িঘর হারিয়ে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়েছে দরিদ্র হিন্দু পরিবারগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো অস্থায়ী তাঁবু গেড়েছে আগুনে ঘর পুড়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলোর জন্য। সেখানে কেউ কেউ ঠাঁই নিয়েছেন। চোখেমুখে হতাশা আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে পোড়া ঘরের কাঠ-কয়লা, হামলায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ঘরের টিন সরাতে দেখা গেছে অনেককে।

স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল সুফলা রানীর। রোববার রাতে উত্তেজিত জনতার দেওয়া আগুনে তাঁর সেই সুখের কুঠির পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পোড়া ছাই হাতে কাঁদতে কাঁদতে সুফলা বলেন, ‘মোর তো কোনো দোষ নাই। তাও ওমরা মোর সুখের সংসার শেষ করি দেইল। ছইল, স্বামী নিয়া এখন কোনটে থাকি। কী দিয়া ঘর বানাই? কী খায়া বাঁচিম। বৃষ্টির দিনোত কোনটে মাথা গুজাইম।’

অনিতা রানীর চারটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হারিয়েছেন গরু-ছাগল। এখন তিনি নিঃস্ব। ঠাঁই নিয়েছেন মন্দিরে। তিনি বলেন, ‘কিছু বুঝার আগোতে বাড়িঘরোত আসি হামলা শুরু করছে। জীবন বাঁচার ভয়োতে বাড়ি ছাড়ি পালে গেছনো। কিছু নিবার পাই নাই। ওমার (উত্তেজিত জনতা) দেওয়া আগুনোত মোর সউগ শ্যাষ। ভোরে আসি দেখি গরু-বাছুর, কাপড়চোপড়, টাকাকড়ি সউগ নিয়া গেইছে। মুই এখন পথের ফকির। আকাশের নিচোত থাকোচুচি।’

ওই গ্রামের হুলু দাস (৪০) বলেন, ‘পাখির মতো খড়কুটো জোগাড় করে অনেক কষ্টে ঘরবাড়ি করেছিলাম। টিউবওয়েল, গোসলখানা, টয়লেট কিছু নেই। ঘরের সঙ্গে সব জ্বলেপুড়ে গেছে। এই অবস্থায় কোথাও কাজেও যেতে পারছি না। কীভাবে কী করব বুঝে উঠেতে পারছি না। আবার কবে স্বাভাবিক হবে সবকিছু ভগবানেই জানে।’

রোববার রাতে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে উত্তেজিত জনতা ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করায় তারা চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েছে।

৩৮ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া বড় করিমপুর গ্রামে রোববার রাতে হিন্দুপল্লিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ২৫টি ঘর পুড়ে যায়। এ সময় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে। ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

৪২ জন আসামির মধ্যে ৩৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৩ আসামি কিশোর হওয়ায় তাদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। গতকাল বিকেলে এই আদেশ দেন পীরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী।

পীরগঞ্জে সহিংসতার ঘটনার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননা করে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার দায় স্বীকার করেছেন সেই যুবক। গতকাল মঙ্গলবার তিনি জেলার পীরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক ফজলে এলাহীর কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান আদালত পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গত সোমবার রাতে জয়পুরহাট থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঘটনা পরিকল্পিত: স্পিকার
পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন ওই আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল দুপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর কসবা গ্রামের উত্তরপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

স্পিকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, হামলার সময় অনেক লোককে তারা চিনতে পারেনি। এদের অনেকেই বহিরাগত ছিল। তাদের হাতে পেট্রলজাতীয় পদার্থ ছিল। অবশ্যই এটা পরিকল্পিত ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপালগঞ্জে কারাগার থেকে হাতকড়া-পোশাক চুরি, কারারক্ষী গ্রেপ্তার

বিচারককে ধন্যবাদ দিলেন হাসানুল হক ইনু

ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে হিন্দুপল্লিতে ভাঙচুর, ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশও

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উত্তেজনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে বিরোধ

১৭ বছর পর আদালত অবমাননার রায়, সাবেক ডিসি-এডিসিসহ ৪ জনের কারাদণ্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত