Ajker Patrika

সড়কে কাদা, ২০ গ্রামে যান চলাচল বন্ধ

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ২১
সড়কে কাদা, ২০ গ্রামে যান চলাচল বন্ধ

গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ২০ গ্রামে। এসব গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অরুয়াইল-সরাইল সড়ক

কর্দমাক্ত হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে সড়কে কোনো যানবাহন না থাকায় অনেক মানুষ হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের সঙ্গে চুন্টা, পাকশিমুল, অরুয়াইল ইউনিয়নসহ নাসিরনগরের ২০ গ্রামের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই অরুয়াইল-সরাইল সড়ক। গত দুই দিন টানা বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে যায় এ সড়ক। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলছে দুই দিনের বৃষ্টিতে অরুয়াইল-সরাইল সড়কের চুন্টা থেকে ভুইশ্বর বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে পানি ও কাদা জমে যাওয়ায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি কাজে মেঘনার নৌপথে আশুগঞ্জ হয়ে জেলা সদরে যাচ্ছে মানুষ।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। অথচ পাঁচ বছর ধরে সড়কটির ভুঁইশ্বর থেকে চুন্টা পর্যন্ত বেহাল অবস্থায় আছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে। ফলে ২০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার না করা হলে এলাকার মানুষ নিয়ে গণ-অনশন নামা হবে।

জানা গেছে, দুই বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কার করা হয়। বাকি রয়েছে চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজোর থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভুঁইশ্বরবাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার অংশ। এ অংশটি পুরোপুরি হাওরের মধ্যে পড়েছে। প্রতিবছর বর্ষার ভাঙনে পড়ে ওই অংশটুকুর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার এই ভাঙা অংশটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অরুয়াইল আবদুস সাত্তার কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসেন মৃধা আজকের পত্রিকাকে জানান, সরাইল সদর থেকে অরুয়াইলে আসার একমাত্র সড়ক এটি। বৃষ্টির কারণে ১২ কিলোমিটার রাস্তার ৩ কিলোমিটার পানি ও কাদায় একাকার হয়ে গেছে। কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার দায়িত্ব পালনের জন্য জুতা হাতে নিয়ে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে কেন্দ্র পৌঁছতে হয়েছে তাঁদের।

অরুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ইউসুফ মিয়া জানান, কাদার কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। সাবানের মতো পিচ্ছিল। দুবার পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গেছেন তিনি। অফিসের বিশেষ কাজে সরাইল সদরে গিয়েছিলেন তিনি।

বরইচারা গ্রামের লিয়াকত মিয়া জানান, বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি কাদা হয়ে যাওয়ায় তিনি তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ এই কর্দমাক্ত ভাঙা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলে না।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আদিম রাজা বলে, ‘আজ দুপুর ১২টার দিকে আমাদের স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। রাস্তার অবস্থা খারাপ। রাস্তায় রিকশা-সিএনজি-অটোরিকশার কোনোটাই নেই। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুলে যাচ্ছি। সকাল থেকে বৃষ্টি। ১ মিনিটের জন্যও থামিনি। পরীক্ষা তো দিতে হবে। তাই হেঁটেই কাদা-পানি ভেঙে স্কুলে যাচ্ছি।’

অটোরিকশাচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘শুনেছি ৩-৪টি গাড়ি উল্টে গেছে। তাই গাড়ি গ্যারেজে রেখে আসলাম। আজ আর গাড়ি নিয়ে বের হব না।’

এলজিইডির উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জানান, সড়কটির মাঝখানের আড়াই কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজের জন্য ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। মানুষের আর দুর্ভোগ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত