Ajker Patrika

ভাঙা সেতুতে সাঁকোর জোড়া

মিজানুর রহমান, কাউনিয়া
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১৫: ০৮
ভাঙা সেতুতে সাঁকোর জোড়া

কাউনিয়ায় পাঁচ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথে থাকা সেতু দেবে যাওয়ার পাঁচ বছর পরেও সংস্কার করা হয়নি। উপজেলার আজমখাঁ গ্রামে সেতুটির জায়গায় সাঁকো বানিয়ে তিস্তার শাখা মানস নদ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে হেঁটে চলাচল করা গেলেও গাড়িতে করে কৃষিপণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।

টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন জানান, সেতুটির পূর্বপাড়ে আজমখাঁ, গনাই, হয়বৎখাঁ, বিদ্যানন্দ ও রামসিং গ্রামের একাংশ রয়েছে। পশ্চিম পাড়ে আছে দুটি হাটসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরসহ হাটবাজার ও স্কুল-কলেজে যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। বন্যায় ধসে যাওয়া সেতু ও সংযোগ সড়ক সংস্কার না করায় এলাকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শুনছেন, সেতুটি সংস্কার করা হবে, কিন্তু হচ্ছে না।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে মানসের ওপর একটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুর পশ্চিমাংশ পুরোটা দেবে যায় এবং উভয় পাশের সড়কও ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে গ্রামের লোকজন বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটির এক পাশ দেবে আছে। মানুষ সাঁকোর ওপর দিয়ে চলছেন। আজমখাঁ গ্রামের শফিকুল ও আনোয়ারসহ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাঁকোটিও নড়বড়ে। হাঁটা ছাড়া কোনো যানবাহন চলে না। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও ভ্যান নিয়ে যাওয়ার সময় নিচে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কৃষক শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ব্রিজটি ভেঙে যাওয়া পর কাঠের সাঁকোর ওপর দিয়ে কোনো পণ্যবোঝাই গাড়ি পারাপার হতে পারে না। ব্রিজটি সংস্কার হলে ফসল সরাসরি গাড়িতে করে হাটে নেওয়া যেত। তখন খরচও কম হতো।’

রামসিং গ্রামের নুর ইসলাম মন্ডল জানান, বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় রোগীদের কোলে করে সাঁকো পার করার পর গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

সেতুর পূর্ব পাশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা কাউনিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। তাদের পাশাপাশি অন্যদের হাটবাজার বা জেলা শহরে যেতে হলে ভাঙা সেতুটি পার হয়ে যেতে হয় বলে জানান বিদ্যানন্দ গ্রামের সার ব্যবসায়ী মোক্তার আলী।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সেতু এবং সংযোগ সড়কটি সংস্কার করা খুবই জরুরি বলে মত দেন টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। গ্রামের লোকজন ব্রিজটির নাম দিয়েছে কোমর ভাঙা ব্রিজ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজের পূর্ব পাশের কৃষিনির্ভর গ্রামের হাজারো মানুষকে যাতায়াতে চরম দুভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, গ্রামীণ কাঁচা সড়কে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় পাকা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের আওতায় এটি নির্মাণ করা সম্ভব।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান হাবিব সরকার বলেন, ‘আজমখাঁ গ্রামে মানস নদের ওপরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্রিজটির নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন পাওয়া যেতে পারে এটা বলা সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত