Ajker Patrika

লালপুরের শুঁটকি যাচ্ছে ভারতে

মো. নিয়ামুল হক, আশুগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১০: ৫০
লালপুরের শুঁটকি যাচ্ছে ভারতে

দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রামের চ্যাপাসহ বিভিন্ন শুঁটকি।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে ছিল। এ জেলায় বসবাসকারী অনেক পরিবারেরই এখনো ত্রিপুরায় আত্মীয়স্বজন রয়েছে। এই সুবাদে বিভিন্ন সময় যাতায়াত হয় দুই দেশের মানুষের।

প্রথমে স্বজনদের মাধ্যমে মেঘনা ও তিতাস নদীর মিঠা পানির মাছের শুঁটকি নেওয়া হয় ভারতে। পরে ওপার বাংলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ শুঁটকি। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিকভাবে ভারতে শুঁটকি পাঠাতে শুরু করেন।

বর্তমানে ভারত ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই শুঁটকি। এ সব দেশেও লালপুরের শুঁটকি রপ্তানি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এই এলাকার মানুষের জন্য মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করা সহজ হয়ে উঠেছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার নারী-পুরুষের।

এ ছাড়া এখানকার শুঁটকির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা থাকে স্থানীয় বাজারে। এর ফলে বাজারে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

এ এলাকার সাধারণ মানুষজন ছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং যুবকদের বড় একটা অংশ এখন নানাভাবে যুক্ত আছেন শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে।

জানা গেছে, কয়েক দশক আগে ৮ থেকে ১০টি মাচা (ডাঙ্গি) নিয়ে লালপুরের শুঁটকি পল্লির যাত্রা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। ঐতিহ্যবাহী লালপুর বাজারের দক্ষিণ দিকে নদীর তীরে সারি সারি মাচা। ছোটবড় মিলিয়ে তিন শতাধিক মাচা রয়েছে।

শুঁটকি পল্লিতে প্রক্রিয়াজাত শুঁটকির মধ্যে অন্যতম চ্যাপা (সিঁদল) শুঁটকি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে অনেক জনপ্রিয়। তবে এখানকার চ্যাপা ছাড়াও ১২ থেকে ১৫ প্রজাতির শুঁটকি পাওয়া যায়। যেগুলো সাধারণত তিতাস ও মেঘনা নদীর মাছ শুকিয়ে করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা ভাল হলে প্রতি মৌসুমে গড়ে ২৫-৩০ কোটি টাকার শুঁটকি ভারতে রপ্তানি হয়। যা থেকে বাংলাদেশের ৫-৭ কোটি টাকার ব্যবসা হয় বলে জানান অনেকে।

লালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৯৪ সাল থেকে আমি এ ব্যবসা করি। আমার আরও ব্যবসা আছে। তবে শুঁটকির ব্যবসাটাই প্রধান। তবে এখানকার কোনো ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে সারা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও আমরা বড়সড় ভূমিকা রাখতে পারব।’

ভারতের আগরতলায় শুঁটকি রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, তিনি নিজেও ওখানে শুঁটকি পাঠান। ওখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে। ওখান থেকে পাঠানো চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে শুঁটকি পাঠানো হয়।

আরেক ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘বাবার পর শুঁটকি ব্যবসার হাল ধরেছি। গত বছর আমাদের ব্যবসা অনেক খারাপ গেছে। তারপরও আমরা এবারের মৌসুমের দিকে তাকিয়ে আছি।’

ব্যবসায়ী তফসির আহমেদ বলেন, ‘আমি অনেক দিন থেকে কারবারির চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুঁটকি পাঠাই। সবকিছুই আমরা নিজেরা করি। সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো আরও বড় আকারে ব্যবসাটা করতে পারতাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত