Ajker Patrika

মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকলে কাজ হবে না

রানা আব্বাস
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১০: ৫৩
মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকলে কাজ হবে না

বুলাওয়ে ব্রেভসের হয়ে জিম আফ্রো টি-টেনে ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। প্রথমবার বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা দারুণ হলো তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো খেলায় নিয়মিত বিদেশি লিগ থেকে প্রস্তাব এলেও খেলার অনুমতি মিলছে না। বিসিবির অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না পাওয়া, টি-টেন  অভিজ্ঞতা, বিশ্বকাপ—এসব নিয়েই গতকাল হারারে থেকে ফোনে বিস্তারিত বললেন তাসকিন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

প্রশ্ন: জিম্বাবুয়ে-পর্ব শেষ হলো। টি-টেন টুর্নামেন্ট তো বটেই, প্রথমবার বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গেলেন। সব মিলিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
তাসকিন আহমেদ: অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। এর আগে বিশ্বের সব জায়গা থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু খেলা হয়নি একটাও। এই প্রথমবার বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেললাম। আল্লাহর রহমতে বোলিং ভালোই হয়েছে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা ভালোই হয়েছে বলব।

প্রশ্ন: খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে টানা ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এক দিনে দুটো ম্যাচও খেলেছেন। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
তাসকিন: না, আল্লাহর রহমতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। যদিও ইনটেনসিটি বেশি থাকে। তবে আমার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। 

প্রশ্ন: এ ধরনের লিগ থেকে সাধারণত কী শেখা হয়? 
তাসকিন: হ্যাঁ, শেখার আছে। ভালোই শেখার আছে। ১০ ওভারের খেলায় প্রতিটি ওভারেই ব্যাটারের ইনটেন্ট থাকে মারার। আক্রমণ করার। একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে যে টি-টেন, টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট—ভালো জায়গা থেকে সুইং করাতে পারলে ব্যাটারদের জন্য একটু সমস্যা হয়। সেটা যেকোনো ফরম্যাটেই হোক। 

প্রশ্ন: টুর্নামেন্টে নিজের শেষ ম্যাচ খেলার পর সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (১১) ছিলেন। পরে মোহাম্মদ হাফিজ আপনাকে টপকে গেছেন। নিজে ভালো করেছেন, কিন্তু দল শেষ চারে উঠতে পারেনি। উঠলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও হতে পারতেন। এটা নিয়ে কি একটু আফসোস থেকে গেছে?
তাসকিন: দুর্ভাগ্য, আমাদের তো ম্যাচ শেষ (শেষ চারে ওঠার আগে)। আবার আমি একটা ম্যাচ কমও খেলেছি। সব মিলিয়ে আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট ভালোই করেছে। ব্যাটিংয়ে খারাপ করায় আমরা তিনটা ম্যাচ হেরে গেছি।

বাংলাদেশের হয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তাসকিনপ্রশ্ন: জিম্বাবুয়েতে সিকান্দার রাজার সঙ্গে ভালোই সময় কাটল তাহলে?
তাসকিন: সে (রাজা) আমার অনেক কেয়ার করেছে। আমাকে হোমলি ফিল দেওয়ার চেষ্টা করছে। রিলাক্স থাকতে সহায়তা করেছে। বলেছে, কোনো চাপ নেই। খেলা ভালো হোক, খারাপ হোক, নিজের মতো উপভোগ করো। আর ব্রেভস ফ্যামিলি, সত্যিই অনেক ভালো দল ছিল। ম্যানেজমেন্টও খুব ভালো ছিল। এদের আবুধাবিতে চেন্নাই ব্রেভস নামে একটা দল ছিল। আবার এখানে বুলাওয়ে ব্রেভস। এদের (ব্রেভস) ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় চিন্তা। তারা বড় বড় আসরে খেলতে চায়। 

প্রশ্ন: গত দুই-আড়াই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো করছেন। আপনাকে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং আক্রমণের নেতাও বলা হচ্ছে। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে এমন কিছু সময় আসে, যখন তিনি যেভাবে পারফর্ম করতে চান, সেভাবেই পারেন। 
আপনি কি তেমন একটা জায়গায় আসতে পেরেছেন? 
তাসকিন: না, আমার ওই মুহূর্ত এখনো আসেনি। যেভাবে চাচ্ছি, তা-ই তো আর হচ্ছে না। 

প্রশ্ন: তবু যদি জানতে চাই, নিজের সেরা সময়ের কাছাকাছিও কি যেতে পেরেছেন? 
তাসকিন: কাছাকাছিও না, শুধু আগের চেয়ে একটু এগিয়েছি, এই যা। আমার আরও উন্নতির বাকি। আরও শেখার বাকি। আমার সেরাটা (সময়) আসেনি। শুধু মেহনত আর প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে। তবে একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার লক্ষ্যই হচ্ছে সেরাটা দিয়ে নিয়মিত পারফর্ম করার চেষ্টা করা। গ্যারান্টি দিয়ে তো বলা যায় না, পারফরম্যান্স হবেই। তবে মাঠে ও মাঠের বাইরে সব ঠিক রাখছি। ১১০ ভাগ দিচ্ছি, সেটা যে ফরম্যাটে খেলি, যেখানেই খেলি। আমার হাতে এতটুকুই আছে। 

প্রশ্ন: ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে একাধিকবার খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন, কিন্তু খেলতে পারলেন এই প্রথম। সেটিতে দারুণ করেছেন।  আপনার আরও প্রস্তাব আসছে। এখানে কি মনে হয়, এনওসি দিতে বিসিবি আরও নমনীয় হতে পারে? 
তাসকিন: জাতীয় দলের ব্যস্ততার বাইরে ফাঁকা সময়, ওয়ার্ক লোড চিন্তা করে বিসিবি যখন এনওসি দেবে...এটা ঠিক আছে, যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ আছে, এশিয়া কাপ আছে। আর ক্ষতিপূরণও তারা (বোর্ড) দেবে। আমি এতেই খুশি। 

Captureপ্রশ্ন: পেসারদের মধ্যে আপনি তিন সংস্করণে নিয়মিত খেলেন বলেই কি বিসিবি আপনাকে এনওসি দিতে বেশি আপত্তি করে? 
তাসকিন: হয়তো সেটাই। যেহেতু তিন সংস্করণে খেলা সহজ নয়। এখানে ইনজুরির ঝুঁকি থাকে। এ কারণে দিতে চায় না যেন ইনজুরিতে না পড়ি। 

প্রশ্ন: যেভাবে বিদেশি লিগ বাড়ছে, জাতীয় দলের সতীর্থদের অনেকেই বাইরে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। আপনি নিয়মিত প্রস্তাব পেয়েও সেখানে অনেক সময় খেলতে পারছেন না। একটু মন খারাপ নিশ্চয়ই হয়?
তাসকিন: খারাপ লাগে না, এটা বলা ভুল। খারাপ লাগে। তবে মনে করি, সামনে আরও ভালো জায়গায় আরও বড় বড় লিগ খেলতে পারব। জীবনে ভালো-খারাপ মুহূর্ত থাকবে। এরই মধ্যে এগিয়ে যেতে হবে। মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকলে কোনো কাজ হবে না। 

প্রশ্ন: ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি আপনার। ভারতে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আপনার কাছে ভুলে যাওয়ার এক টুর্নামেন্ট। এবার ভারতেই হতে যাওয়া আরেকটি বিশ্বকাপে ভালো করতে কতটা উন্মুখ হয়ে আছেন? 
তাসকিন: এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ বড় মঞ্চ। তবে সেখানে একেকটা ম্যাচ স্বাভাবিক ম্যাচের মতোই হবে। হয়তো ইভেন্ট অনেক বড়। একই লক্ষ্য থাকবে, বাড়তি কিছু নেই। প্রক্রিয়া আর উন্নতি করার চেষ্টা। বিশ্বকাপেও ভালো জায়গায় বল করতে হবে, চট্টগ্রামে দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও ভালো জায়গায় বল করতে হবে (হাসি)। নিজের কিছু লক্ষ্য আছে, বিশ্বকাপে সেসব যদি অর্জন করতে পারি, আপনাকে তখন সাক্ষাৎকার দিয়ে বলব (হাসি)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত