Ajker Patrika

পবিত্র ঈদুল আজহা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৮: ০৪
পবিত্র ঈদুল আজহা

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানির মাধ্যমে পালিত হয় এই উৎসব। জানমালের মায়া বিসর্জন দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই পবিত্র ঈদুল আজহার পরম লক্ষ্য। পাশাপাশি কোরবানি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় দারুণ ভূমিকা রাখে। 

প্রায় ৫ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার প্রস্তুতি নিয়ে অনন্য ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পুত্র ইসমাইলও মহান আল্লাহর আনুগত্যের চূড়ান্ত স্তরে উপনীত হয়ে নিজেকে পিতার চাকুর নিচে সঁপে দেন। তাঁদের এই ত্যাগ আল্লাহর এতই পছন্দ হয় যে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্থানগুলো অমর করে রাখতে আল্লাহ তাআলা হজের বিধান দেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ধর্মেও হজকে অন্যতম প্রধান ইবাদত সাব্যস্ত করা হয়। এ ছাড়া তাঁর উম্মতের মধ্যে সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানির বিধানও আবশ্যক করা হয়। 

হজ মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব সম্মেলন। বর্ণ, গোত্র ও জাতীয়তার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দেয় হজ। শুভ্র কাপড়ে নিজেকে আবৃত করে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে অবস্থান করে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয় হাজিরা। হজের আনুষ্ঠানিকতা কয়েক দিন ধরে চললেও পবিত্র ঈদুল আজহার দিনের মূল ইবাদত ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি। 

কোরবানির মাধ্যমে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও সম্পদত্যাগের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনই কোরবানির প্রধান শিক্ষা। কোরবানি শুধু আনন্দ-উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও দর্শন। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি। 

ঈদুল আজহার উদ্দেশ্য অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা পশুশক্তি, কাম-ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকেই ত্যাগ করতে হয়। তাই শুধু পশু নয়, প্রয়োজন পশুত্বের কোরবানি। 

সমাজের অধিকাংশ মানুষেরই এখনো কোরবানি করার সামর্থ্য নেই। কোরবানির দিনগুলোতে যেন তারা কোনোভাবেই হীনম্মন্যতায় না ভোগে, সে জন্য কোরবানিদাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অহেতুক বিত্তবৈভবের মহড়া না দেখিয়ে সত্যিকারের ইবাদত ও সমাজসেবার মানসে গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। 

আরেকটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে, ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাই কোরবানির বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব নাগরিকের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা একান্ত জরুরি। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে কোরবানির মাহাত্ম্যকে ম্লান করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রিয়জনদের সঙ্গে আপনার ঈদ সুন্দর কাটুক। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত হোক আপনার কোরবানি। আপনার ঈদ ভ্রমণ হোক নিরাপদ। সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত