Ajker Patrika

বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে, ভেসে যাচ্ছে স্বপ্নের ফসল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১২: ১৬
Thumbnail image

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির পানির ঢল নেমে আসছে নিচের দিকে। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ হয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে কিশোরগঞ্জে। এতে হাওরাঞ্চলের অনেক এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক নদীর পানিও অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ রক্ষার জন্য কৃষকদের প্রাণপণ চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে গেছে।

হাওরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সুনামগঞ্জের একমাত্র ফসল বোরো ধান হুমকির মুখে রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার আনন্দনগরের আরেকটি বাঁধেও ধস দেখা গেছে। তিনি বলেন, এই বন্যার কারণে ৯ লাখ মেট্রিক টন ধান যদি তলিয়ে যায়, তাহলে সেটা বিদেশ থেকে আমদানি করাও কঠিন হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে এমন শঙ্কায় সময় পার করছেন হাওরবাসী। সোমবার ভোররাত থেকে সুনামগঞ্জে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। যার ফলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ শাখানদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসল রক্ষা বাঁধগুলোকে ফেলেছে ঝুঁকির মধ্যে। সুনামগঞ্জে অসময়ে বন্যা মোকাবিলা করতে জেলা প্রশাসন মনিটরিং দল গঠন করেছে। তারা জেলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ধসে গেছে, সেই সঙ্গে সরুপথে পানি প্রবেশ করছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে মাটিয়ান হাওরে চাষ করা ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বোরো ধান। উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের পাশে মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ উপ-প্রকল্পের ৪৪ নম্বর প্রকল্পের বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সোমবার সরেজমিনে বাঁধে দেখা যায়, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ চালাচ্ছেন। বাঁধে মাটির বস্তা, বাঁশের খুঁটি ও ধসে যাওয়া অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার বাঘার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষকদের চোখের সামনেই ভেসে যাচ্ছে হাজার একর ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাইরে হওয়ায় এই বাঁধটিতে দেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। শুরু থেকেই বাঘার হাওরে প্রকল্প দেওয়ার দাবি জানালেও পাউবো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। সোমবার বেলা ৩টায় দেখা যায়, নদীর পানি উপচে হাওরে প্রবেশ করেছে। নিমেষেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের ফসল।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের ইটনা হাওরের ধনু ও বাউলা নদীর পাড়ের নিচু এলাকার ২০০ একর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানির নিচ থেকে কাঁচা-পাকা ধান কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া ধনু ও বাউলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ রয়েছে হুমকির মুখে। কোনো কোনো জায়গায় বাঁধে ফাটল ধরেছে।

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপর দিকে কোন কোন এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে এবং তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি মানুষের বসতবাড়িসহ কয়েকটি হাটবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, উজানে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীর ডিমলায় বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি। অসময়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকায় চরাঞ্চলে সহস্রাধিক একর জমিতে উঠতি মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, গম, তামাক ও ভুট্টার খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে নদীর পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য তিস্তা ব্যারাজের বন্ধ ৪৪টি গেটের মধ্যে ৮টি গেট খুলে দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলা আজকের পত্রিকাকে জানান, উজানের ঢলে গত চার দিনে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সাত হাজার কিউসেক পানি রয়েছে, যা চৈত্র মাসের এ সময়ে এত পরিমাণ পানি নদীতে থাকে না।

হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পরেছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। বিশেষ করে যেসব কৃষক বর্গাচাষি ও ঋণগ্রস্ত, তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক দিন ধরে উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে চরের কৃষকদের চাষ করা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচ, ভুট্টা, লাউ, কুমড়া, তরমুজ, শসা ও মসলাজাতীয় অনেক ফসলের খেত পনিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে চর এলাকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সিলেটের জৈন্তাপুর গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী ও বড় নয়াগং, রাংপানি নদীর পানি স্বাভাবিকের বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ৷ পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বোরো ধান৷ এ ছাড়া বন্যায় আটকে পড়া পরিবারের লোকজন উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে দেখা যায়। বন্যায় আটকে পড়াদের খোঁজখবর রাখছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত