Ajker Patrika

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি: বিতর্কিতরাও পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২: ৩১
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি: বিতর্কিতরাও পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ

বিতর্কিতদের ঠাঁই না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ জুটেছে বিতর্কিত ও বিভিন্ন অভিযোগ থাকা নেতাদের। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত ৩০১ সদস্যের কমিটিতে চাঁদাবাজি, যৌন হেনস্তা, সিট-বাণিজ্য, মারধর, কক্ষ দখলের অভিযোগ থাকা নেতারাও স্থান পেয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগও আছে একজনের বিরুদ্ধে। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও পদ পেয়েছেন। পদবঞ্চিতদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্মেলনের সাত মাস পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলো। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। ২০ ডিসেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও নাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তবে এই তিন কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ করে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হবে। পদবঞ্চিত এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সভাপতি বারবার বিকেন্দ্রীকরণের কথা, অনুগতদের চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করা নেতাদেরই পদে বসিয়েছেন। নতুনেরা পদ পাননি। এতে তৃণমূলের কর্মীরা আশাহত হয়েছেন।

সূত্র বলেছে, সহসভাপতি পদ পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে মো. শাহজালালের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে রোকেয়া হলের সাবেক এজিএস ও নতুন কমিটির উপ-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বীকে মারধরের অভিযোগে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিলেন। আল আমিন রহমানের বিরুদ্ধে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনরত ছাত্রীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে। শেখ শামীম আহম্মেদ তূর্য্যের বিরুদ্ধে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। ঢাবির মাস্টারদা সূর্য সেন হলের কক্ষ থেকে বরাদ্দ পাওয়া ছাত্রকে বের করে দিয়ে নিজের কর্মীদের তোলার অভিযোগ রয়েছে সৈয়দ শরিফুল ইসলাম শপুর বিরুদ্ধে।

২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির সন্দেহে মারধর করে হলছাড়া করার অভিযোগ আছে সাইফুল্লা আব্বাছী অনন্তের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ রয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রানা ও উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমির হামজার বিরুদ্ধেও। হামজার বিরুদ্ধে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গণমাধ্যমকর্মীকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে।

ছাত্রীদের নির্যাতন, সিট-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকা ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা উপ-পাঠাগার সম্পাদক হয়েছেন। গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স (হোম ইকোনমিকস) কলেজ শাখার সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি ও সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী যথাক্রমে উপ-উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন সম্পাদক এবং উপ-সাহিত্য সম্পাদক পদ পেয়েছেন। তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধেই কলেজের সামনে লেগুনাস্ট্যান্ড ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। আরেক উপ-সাহিত্য সম্পাদক ও বদরুন্নেসা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমনের বিরুদ্ধে হোস্টেলের রুম দখল ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

মারধরের ঘটনায় বহিষ্কৃত আরিফুল ইসলাম হয়েছেন উপ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক। সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর শিকদার ও শিক্ষা পাঠচক্র সম্পাদক মো. মিশাত সরকারের বিরুদ্ধে পলাশী বাজারের মালিক সমিতির কাছে ‘উপঢৌকন’ দাবির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের বিরুদ্ধে। বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। চাঁদা না পেয়ে কর্মী পাঠিয়ে লেগুনা ভাঙচুর ও মালিকদের মারধরের অভিযোগ আছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন ও উপশিক্ষা পাঠচক্র সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

টিএসসিতে ‘মদ্যপ’ অবস্থায় মেয়েদের ওয়াশরুমে প্রবেশ করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির অভিযোগ উঠেছিল উপ-স্কুলছাত্র সম্পাদক তানজিন এ আলামিনের বিরুদ্ধে। বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইমদাদুল হাসান সোহাগ হয়েছেন উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেওয়া জেবুন্নাহার শিলা পেয়েছেন সদস্য পদ। তিনি ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্রিমিনাল অফেন্স, চাঁদাবাজি ইত্যাদি প্রমাণের বিষয় রয়েছে। গণমাধ্যমে তো সংবাদ আসেই। তবে কেউ যদি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অপরাধী হয়, তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। সোহাগকে (ইমদাদুল হাসান সোহাগ) ঢাবির অব্যাহতি প্রত্যাহার করায় পদ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘একজন চাকরি পেয়েছে, তবে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে মাস্টার্স করছে। তাই পদ দেওয়া হয়েছে। অনেকে পার্ট টাইম চাকরি করে। সেটা করতেই পারে। শাহজালালের বিষয়টি আদালতে চলমান, সেখানে প্রমাণিত হলে তার পদে থাকার সুযোগ নেই। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু কেউ বাইরে যেকোনো ইউনিটে রাজনীতি করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত