Ajker Patrika

হাজারো স্বপ্ন মেলছে ডানা

নাজমুল হাসান সাগরজাজিরা (শরীয়তপুর) থেকে
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৭: ০৬
Thumbnail image

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। একটা সময় অবহেলিত ও দুর্গম নদী এলাকা হিসেবে পরিচিত এই অংশে করা হয়েছে সেতুর টোলপ্লাজা। সে কারণে গত কয়েক বছরে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবর্তন হয়েছে এখানে। চোখের সামনে এসব হতে দেখলেও সবকিছুই কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হয় এলাকাবাসীর। জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও পদ্মার বুকে সেতু আর স্বপ্ন নয়। তাই দৃশ্যমান ব্যবহার উপযোগী সেতুর স্বপ্ন যখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে, তখন এসব এলাকার মানুষের মনে ডানা মেলছে হাজারো স্বপ্ন।

এত দিন যে স্বপ্ন বুকে লালন করে এসেছেন এই এলাকার মানুষ, তা পূরণ হবে সহজেই। এমনই একজন রহিমা বেগম। ভালো ছাত্রী ছিলেন, ভালো রেজাল্ট নিয়ে ম্যাট্রিক পাসও করেছেন। ইচ্ছে ছিল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকার কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য বাস্তবতায় ম্যাট্রিক পাস করার পরেই তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। ফলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল রহিমার। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী তিনি। রহিমা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে আমার মতো আর কারও অন্তত ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে না। দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করতে চাই। ছেলেটা ক্লাস টেনে পড়ছে। ওর রেজাল্ট ভালো হলে উচ্চমাধ্যমিক পড়ানোর জন্য ঢাকায় পাঠাব।’

গোলচত্বর থেকে জাজিরার পথ ধরে এগোলে, অদূরেই কুতুবপুর গ্রাম। সেখানে কথা হয় কুতুবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা আকতারের সঙ্গে। তার স্বপ্ন মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিক ঢাকার কোনো ভালো কলেজে পড়বে। আয়েশা বলে, ‘যোগাযোগটা সহজ হওয়ায় পরিবারও এখন মানবে। নইলে এ গ্রামের মেয়েদের ম্যাট্রিকের পরে বিয়ে দিয়ে দেয়।’

এই গ্রামেই তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি। নির্মাণাধীন এই পল্লির পাশেই রফিক খানের ছোট মুদির দোকান। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল আয়েশার সঙ্গে। এবার যোগ দিলেন রফিক। তাঁর ভাষ্যমতে, শুধু শিক্ষা নয়, চিকিৎসাক্ষেত্রেও ব্যাপক সুবিধা হবে তাঁদের। শুধু ফেরির অপেক্ষায় থেকে কত রোগী যে ঢাকায় যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই প্রাণ হারিয়েছেন, তার কোনো হিসাব কেউ দিতে পারবে না।

রফিকের কথার সঙ্গে একমত জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘শুধু জাজিরা না আমাদের দেশের উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থাটাই হলো রাজধানীকেন্দ্রিক। কোনো গুরুতর রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হলে ঘাটের ধীরগতিতেই অনেকের আর পদ্মা পার হওয়ার মতো সময় থাকে না। ফেরির অপেক্ষায় ঘাটেই মারা যায় অনেক রোগী।’

শিক্ষার ক্ষেত্রে যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কিছু মানুষ বঞ্চিত থাকলেও এই অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা শিক্ষায় পিছিয়ে নেই বলে মনে করেন জাজিরা কলেজের প্রভাষক ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ ঢাকায় গিয়ে পড়তে পারেনি, এটার সংখ্যা খুব বেশি না। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় এই এলাকায় ভালো কোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ হবে বলে আশা রাখি।’

এই অঞ্চলে মূলত পাট, বাদাম আর ধানের চাষ হয় ৷ তবে নানা রকম সবজি চাষও হয়। তাই স্বপ্ন দেখছেন কাজীর হাটের ক্ষুদ্র চাষি মহিউদ্দীন আহমেদও। বললেন, ‘সেতু হলে নিজের খেতের ফসল (সবজি) নিয়ে ঢাকার মোকামে যাব। ভোরে উঠে সবজি তুলে প্রথম সকালেই পৌঁছে যাব ঢাকায়। এতে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও লাভ থাকবে ভালো।’

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন 

শেখ হাসিনা তাঁতপল্লিতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছেন তানভির হোসেন। খুলনার রূপসা উপজেলার বাসিন্দা। বললেন, যাতায়াতের ক্ষেত্রে যে সময় আর অর্থ বাঁচবে, এটার মতো বড় উপকার আর হয় না। বাগেরহাটের কচুয়ায় বাড়ি মহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকা থেকে মাছ বা সবজির মতো কাঁচামাল সহজেই পরিবহন করে ঢাকায় আনা যাবে। পরিবহন খরচও কমবে, পণ্যের ন্যায্য দামও পাওয়া যাবে।’ এই দুজনের কথার সঙ্গে সহমত তাঁদের সহকর্মী মো. হাতেম চৌকিদার, বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত