Ajker Patrika

হাওরে অবাধে বৃক্ষ নিধন

সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৫১
হাওরে অবাধে বৃক্ষ নিধন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানকার জীববৈচিত্র্য প্রকৃতপ্রেমীদের কাছে টানে। অসাধু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অবাধে হিজল ও করচগাছ কাটায় সেই জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

এদিকে হাওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আনসার ক্যাম্প এবং জেলা প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনার (ম্যাজিস্ট্রেট) রয়েছেন। তারপরও কমছে না গাছ কাটার প্রতিযোগিতা।

বিশ্বের ১ হাজার ৩১তম রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর। বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ১২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর ভূমি নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা—এ দুই উপজেলা মিলিয়ে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর। স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দা’—এ নিয়ে টাঙ্গুয়ার পাড়ের মানুষের জীবন বান্দা। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদার ফিশারিজ খ্যাত হাওর থেকে হিজল-করচ বন উজাড় হচ্ছে। কিছু অসাধু লোক হাওরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিজল ও করচগাছ কেটে নিচ্ছে। ফলে ওই এলাকা গাছশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

কথা হয় হাওর পাড়ের বাসিন্দা আব্বাস হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এলাকার কিছু মানুষ জলমহালে কাঁটা হিসেবে ব্যবহারের জন্য গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

মিলন আহমদ বলেন, দিন দিন মানবসৃষ্ট ‘নৃশংসতা’র কবলে পড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিযায়ী পাখি আর আসবে না। সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বে এলাকাবাসী।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক নাদের আহমদ বলেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হাওরের জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে পারে। না হলে হুমকির মুখে পড়বে জীবন ও প্রকৃতি।

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনে’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরকে যখন রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়, তখন আমরা খুব আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে আমরা বড় হতাশ। এলাকার কিছু জলমহাল ব্যবসায়ীরা বিলে কাঁটা দেওয়ার জন্য গাছ কেটে নিচ্ছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছোট-বড় ১০৯টি বিল নিয়ে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। এর মধ্যে বড় বিল রয়েছে ৫৪টি। এই হাওরে রয়েছে ১৫০ প্রজাতির গাছ, ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৪১ প্রজাতির মৎস্য ও বন্য প্রাণীর বিপুল সমাহার। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জলমহালে কাঁটা দেওয়ার জন্য টাঙ্গুয়ার থেকে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ আমিও পেয়েছি। আমি তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলেছি যেন এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত