মো. গোলাম রহমান
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু কিছু কথা স্মরণ করে তার যথার্থতা বুঝতে চাই। সারা জীবন তিনি দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা মনে করেছেন। স্বাধীনতার পর যে স্বল্পসময় তিনি পেয়েছেন, তার পুরোটাই দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তায় নিবেদিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ তাঁর ৫২তম জন্মদিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘...এ দেশের মানুষের নিরাপত্তা নেই, অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। (আবুল মনসুর আহমেদ, শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, জানুয়ারি ১৯৮১, প্রথম সংস্করণ)।’
দেশের প্রাকৃতিক ভূসম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর চিন্তাচেতনা। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেল কোম্পানি থেকে পাঁচটি গ্যাসফিল্ড কিনেছিলেন। সেগুলো হলো তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাসটিলা। এই গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা।
বিভিন্ন সূত্র এবং গবেষণায় বঙ্গবন্ধুর এ রকম অনেক কিছুই নতুন করে জানা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক জলবায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বহুল আলোচিত। জলবায়ুর প্রভাবে দেশের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আলোচিত হচ্ছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে কপ-২৬-এ এমন অনেক কিছুই উঠে আসে। ইতিপূর্বেকার জলবায়ু সম্মেলনের রেশ ধরে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় এবং সেগুলোর সমাধানকল্পে গৃহীত প্রস্তাবসমূহে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে গাছ লাগিয়ে সুন্দরবন তৈরি করি নাই। প্রাকৃতিকভাবে এই সুন্দরবন পেয়েছি। সমুদ্রের তটরেখা ধরে এই সুন্দরবনের গাছপালা আমাদের সমুদ্রের গ্রাস থেকে রক্ষা করছে। এটিকে রক্ষা করতে না পারলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা এবং ঢাকার কতিপয় অংশ একসময় সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে এবং এই স্থানসমূহ হাতিয়া, সন্দ্বীপের মতো দ্বীপ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।’ প্রায় ৪৯ বছর আগে এমন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনের প্রাক্কালে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এসব বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছেন। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এর সত্যতা নিরূপিত হলেও সংশ্লিষ্ট মহলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও বিদ্যমান রয়েছে বলে শোনা যায়।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে সবিশেষ স্থান করে নেয়। করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় ৪৮টি দেশ নিয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) গঠিত হয় এবং এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক আহ্বান ছিল, বিশ্বের পরিবেশদূষণ ও অবক্ষয় প্রতিরোধ না করতে পারলে কোভিডের মতো আরও অনেক মহামারির সম্মুখীন আমাদের হতে হবে। এই কথার যথার্থতা সতর্কের সঙ্গে আহ্বান করা যায়। বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ ১০টি কয়লানির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতিল করে। উল্লেখ্য, ৪৮ দেশের সংস্থা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি শেখ হাসিনা সিভিএফ ও কমনওয়েলথ শীর্ষ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এবং সিভিএফ সদস্যদেশগুলোর স্বার্থের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় অত্যন্ত নগণ্য, মাত্র ০.৪৭ শতাংশ অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনা করলে বাংলাদেশ প্রধান কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে পড়ে। এই ঝুঁকিসমূহ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ‘ক্লাইমেট ইমারজেন্সি প্যাক্ট’ গঠনের প্রচেষ্টার কথা বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
‘সিভিএফ কপ-২৬ লিডার্স ডায়ালগ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি জলবায়ু অভিযোজনে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রেস কনফারেন্সে সম্প্রতি আলোচনা করেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ৪৮টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান কর্তৃক ঢাকা-গ্লাসগো ডিক্লারেশন গৃহীত হওয়ায় বিষয়টি জলবায়ু-কূটনীতিতে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে ব্যাপক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মতপ্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হন পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৃতকার্যের জন্য। চলতি বছর সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অধীন এক কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে, বিশেষ করে মুজিববর্ষ উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধুর গাছ লাগানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থেই প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু, নদী নিয়ে অনেক কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ আছে বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডেপুটি কমিশনারদের পতিত জায়গায় গাছ লাগানোর কথা। পরিত্যক্ত শমশেরনগর এয়ারপোর্টে গাছের চারা রোপণের কথাসহ এমন অনেক উদাহরণ আছে সেসব গ্রন্থে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারিবদ্ধভাবে রেসের ট্র্যাকে গাছ লাগিয়ে রেসকোর্সের পরিসমাপ্তির কথা বলেছিলেন। কারাগারে থাকাকালীন বাগান পরিচর্যা করার সময় উদ্ভিদ ও গাছপালা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধের কথা জানা যায়। বাংলাদেশের উর্বর মাটি আর উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর কারণে জীববৈচিত্র্যের বিরাট সম্ভার রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ তাই এত সবুজ ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। কিন্তু মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারে এই জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। এই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য জনগণের সতর্ক ব্যবহারের কথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রবন্ধকার মুন্নি খান এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বন্য প্রাণী আইন প্রণীত হয় ১৯৭৪ সালে। এ আইন জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ঠিক একইভাবে আমরা দেখেছি, ১৯৭২ সালে জল-কূটনীতি বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। জয়েন্ট রিভার কমিশন গঠিত হয়েছে এই সময়ে। নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ওয়াটার পলুশন কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৭৩ প্রণীত হয়েছে। ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে লতাপাতাগুল্ম ও ঔষধি গাছ প্রভৃতি দেখভালের জন্য। এসব উদাহরণ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃতিপ্রেম ও পরিবেশ রক্ষায় তাঁর উৎসাহের কথা জানা যায়।
একই পথরেখা বেয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কপ-২৬ সম্মেলনের একপর্যায়ে বিল গেটস, যিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার, শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শেখ হাসিনার উপস্থাপিত বাংলাদেশের স্থানীয় অভিযোজন মডেলগুলোকে ‘গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য দেশে কাজে লাগানোর বিষয়ে উৎসাহ দেখান। আমরা জানি, বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে কপ-২৬ সম্মেলনের পাঁচজন শীর্ষ ‘ডিল মেকার’-এর অন্যতম একজন হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে দেশের নৈতিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জনের উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই নৈতিক আন্দোলনে বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যত বেশি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, ততই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বড় বড় দেশসহ অধিকাংশ দেশই এ যাত্রায় পরাস্ত।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু কিছু কথা স্মরণ করে তার যথার্থতা বুঝতে চাই। সারা জীবন তিনি দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা মনে করেছেন। স্বাধীনতার পর যে স্বল্পসময় তিনি পেয়েছেন, তার পুরোটাই দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তায় নিবেদিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ তাঁর ৫২তম জন্মদিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘...এ দেশের মানুষের নিরাপত্তা নেই, অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। (আবুল মনসুর আহমেদ, শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, জানুয়ারি ১৯৮১, প্রথম সংস্করণ)।’
দেশের প্রাকৃতিক ভূসম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর চিন্তাচেতনা। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেল কোম্পানি থেকে পাঁচটি গ্যাসফিল্ড কিনেছিলেন। সেগুলো হলো তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাসটিলা। এই গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা।
বিভিন্ন সূত্র এবং গবেষণায় বঙ্গবন্ধুর এ রকম অনেক কিছুই নতুন করে জানা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক জলবায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বহুল আলোচিত। জলবায়ুর প্রভাবে দেশের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আলোচিত হচ্ছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে কপ-২৬-এ এমন অনেক কিছুই উঠে আসে। ইতিপূর্বেকার জলবায়ু সম্মেলনের রেশ ধরে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় এবং সেগুলোর সমাধানকল্পে গৃহীত প্রস্তাবসমূহে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে গাছ লাগিয়ে সুন্দরবন তৈরি করি নাই। প্রাকৃতিকভাবে এই সুন্দরবন পেয়েছি। সমুদ্রের তটরেখা ধরে এই সুন্দরবনের গাছপালা আমাদের সমুদ্রের গ্রাস থেকে রক্ষা করছে। এটিকে রক্ষা করতে না পারলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা এবং ঢাকার কতিপয় অংশ একসময় সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে এবং এই স্থানসমূহ হাতিয়া, সন্দ্বীপের মতো দ্বীপ হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।’ প্রায় ৪৯ বছর আগে এমন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনের প্রাক্কালে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এসব বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছেন। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এর সত্যতা নিরূপিত হলেও সংশ্লিষ্ট মহলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও বিদ্যমান রয়েছে বলে শোনা যায়।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে সবিশেষ স্থান করে নেয়। করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় ৪৮টি দেশ নিয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) গঠিত হয় এবং এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক আহ্বান ছিল, বিশ্বের পরিবেশদূষণ ও অবক্ষয় প্রতিরোধ না করতে পারলে কোভিডের মতো আরও অনেক মহামারির সম্মুখীন আমাদের হতে হবে। এই কথার যথার্থতা সতর্কের সঙ্গে আহ্বান করা যায়। বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ ১০টি কয়লানির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতিল করে। উল্লেখ্য, ৪৮ দেশের সংস্থা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি শেখ হাসিনা সিভিএফ ও কমনওয়েলথ শীর্ষ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এবং সিভিএফ সদস্যদেশগুলোর স্বার্থের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় অত্যন্ত নগণ্য, মাত্র ০.৪৭ শতাংশ অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনা করলে বাংলাদেশ প্রধান কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে পড়ে। এই ঝুঁকিসমূহ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ‘ক্লাইমেট ইমারজেন্সি প্যাক্ট’ গঠনের প্রচেষ্টার কথা বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
‘সিভিএফ কপ-২৬ লিডার্স ডায়ালগ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি জলবায়ু অভিযোজনে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ের বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রেস কনফারেন্সে সম্প্রতি আলোচনা করেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ৪৮টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান কর্তৃক ঢাকা-গ্লাসগো ডিক্লারেশন গৃহীত হওয়ায় বিষয়টি জলবায়ু-কূটনীতিতে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে ব্যাপক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মতপ্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হন পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৃতকার্যের জন্য। চলতি বছর সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অধীন এক কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে, বিশেষ করে মুজিববর্ষ উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধুর গাছ লাগানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থেই প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু, নদী নিয়ে অনেক কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ আছে বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডেপুটি কমিশনারদের পতিত জায়গায় গাছ লাগানোর কথা। পরিত্যক্ত শমশেরনগর এয়ারপোর্টে গাছের চারা রোপণের কথাসহ এমন অনেক উদাহরণ আছে সেসব গ্রন্থে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারিবদ্ধভাবে রেসের ট্র্যাকে গাছ লাগিয়ে রেসকোর্সের পরিসমাপ্তির কথা বলেছিলেন। কারাগারে থাকাকালীন বাগান পরিচর্যা করার সময় উদ্ভিদ ও গাছপালা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মমত্ববোধের কথা জানা যায়। বাংলাদেশের উর্বর মাটি আর উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর কারণে জীববৈচিত্র্যের বিরাট সম্ভার রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ তাই এত সবুজ ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। কিন্তু মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহারে এই জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। এই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য জনগণের সতর্ক ব্যবহারের কথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রবন্ধকার মুন্নি খান এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বন্য প্রাণী আইন প্রণীত হয় ১৯৭৪ সালে। এ আইন জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ঠিক একইভাবে আমরা দেখেছি, ১৯৭২ সালে জল-কূটনীতি বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। জয়েন্ট রিভার কমিশন গঠিত হয়েছে এই সময়ে। নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। ওয়াটার পলুশন কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৭৩ প্রণীত হয়েছে। ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে লতাপাতাগুল্ম ও ঔষধি গাছ প্রভৃতি দেখভালের জন্য। এসব উদাহরণ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃতিপ্রেম ও পরিবেশ রক্ষায় তাঁর উৎসাহের কথা জানা যায়।
একই পথরেখা বেয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কপ-২৬ সম্মেলনের একপর্যায়ে বিল গেটস, যিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার, শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শেখ হাসিনার উপস্থাপিত বাংলাদেশের স্থানীয় অভিযোজন মডেলগুলোকে ‘গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য দেশে কাজে লাগানোর বিষয়ে উৎসাহ দেখান। আমরা জানি, বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে কপ-২৬ সম্মেলনের পাঁচজন শীর্ষ ‘ডিল মেকার’-এর অন্যতম একজন হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে দেশের নৈতিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জনের উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই নৈতিক আন্দোলনে বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যত বেশি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, ততই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বড় বড় দেশসহ অধিকাংশ দেশই এ যাত্রায় পরাস্ত।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
৬ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫