Ajker Patrika

ভাঙনের মুখে পাঁচ উপজেলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ভাঙনের মুখে পাঁচ উপজেলা

চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই প্রমত্তা যমুনা নদীর দুই পাড়ের ভাঙন মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। নদীতীরবর্তী জেলার পাঁচটি উপজেলার শত শত ঘরবাড়ি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শুধু গত সেপ্টেম্বর মাসে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুরে নদীভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে বদলে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার মানচিত্র।

এনায়েতপুরে জালালপুর আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের চারটি ঘর ১৫ দিন আগে যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। আরও দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে।

ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। নদীগর্ভে বাড়িঘর হারানো মানুষকে সরকারিভাবে পুনর্বাসন করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান।

ভাঙন-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের বাসিন্দারা। বর্তমানে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুরের বিভিন্ন স্থানে চলছে ব্যাপক ভাঙন।

শাহজাদপুরের জালালপুর গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি সব এখন নদীগর্ভে। আমি কোনো কিছু সরাইতে পারিনি।’

চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরের রোকেয়া বেগম বলেন, স্বামীর রেখে যাওয়া বসতভিটা ও ফসলি জমি ছিল তাঁর। সবকিছু এখন নদীতে। বর্তমানে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারের কাছে তাঁর দাবি, নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের তালিকা করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করার।

গত ৪ দশকে কাজীপুর উপজেলার আমন মোহর, চর কাজীপুর, মাইজবাড়ি, ঢেকুরিয়া, জগৎগঞ্জ, দোয়েল, শুভগাছা, ট্যাংলাহাটা; শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল, কৈজুড়ী, জালালপুর, মনাকোষা, দামুয়াপাড়া, সাহেবপাড়া, কচুয়া, গুপিয়াখালি, ভাটপাড়া, লহিন্দকান্দি, জগতলা (একাংশ), মৌকুড়ি; চৌহালী উপজেলার পশ্চিম খাসকাউলিয়া, খাস ধলাই, মুরাদপুর, রেহাই কাউলিয়া, খানপাড়া, চৌদ্দরশি, খাস পুকুরিয়া, খাস বেলদারপুর; সদর উপজেলার সয়দাবাদ (আংশিক), মেছরা, কাওয়াকোলা, রতনকান্দি (আংশিক), ছোনগাছা (আংশিক), শাহজাদপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে।

নদীগর্ভে বিলীন হওয়া এসব গ্রামের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন চর ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান বলেন, ‘যাদের বাড়িঘর নদীতে ভেঙে যাচ্ছে, তাঁদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পেলে আমরা তাদের পুনর্বাসন করে থাকি। আমাদের প্রস্তুতি আছে। ৩০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আছে। এ ছাড়া ২০০ বান্ডিল টিন আছে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আর যাঁদের জমি আছে, ঘর নেই, তাঁদের পুনর্বাসনে সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে এবং বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার বলেন, সিরাজগঞ্জে পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (কাজীপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত)। ইতিমধ্যে এই অঞ্চলের ৩৫ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে। যেটুকু বাকি রয়েছে সেই এলাকা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। কাজীপুর এবং সদরে নদীভাঙন রোধ করেছি। ভূমিও পুনরুদ্ধার হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুরে কিছু স্থানে নদীভাঙন রয়েছে।

নায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সিরাজগঞ্জে আর নদীভাঙন থাকবে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত