Ajker Patrika

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে সবকিছুতেই ‘ভাটার টান’

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে সবকিছুতেই ‘ভাটার টান’

করোনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু। তার মধ্যেই দেখা গেল ডলারসংকট। এতে সীমিত হয়ে যায় পণ্য আমদানি, রপ্তানিতেও দেখা দেয় মন্দা। এসবের প্রভাবে চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায় ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানিসহ সবকিছুতেই ‘ভাটার টান’ চলছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, লাইটার জাহাজ, পরিবহনসহ (ট্রাক-লরি ও কাভার্ড ভ্যান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে আছে। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানেও ব্যস্ততা কমেছে।

কাস্টমস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে মোট ৩৩ হাজার ১৬২টি চালান খালাস (বিল অব এন্ট্রি) হয়। অথচ ২০২২ সালের মার্চে খালাস হওয়া চালানের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৯০১টি। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২৮ হাজার ৪৬১ এবং জানুয়ারিতে ৩৬ হাজার ৯৫৫টি চালান খালাস হয়। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে ছিল যথাক্রমে ৪৪ হাজার ৭৯৭ ও ৫০ হাজার ৯২০টি।

চালান কম খালাস হওয়ায় কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ও কমেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস ২০২২ সালের মার্চ মাসে যেখানে ৫ হাজার ২৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে কাস্টমসের রাজস্ব গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমেছে ৮৯৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং জানুয়ারিতে কমেছে ২১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার বদরুজ্জমান মুন্সি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্দা এবং দেশে ডলারসংকটের কারণে আমদানি সীমিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, বন্দরে পণ্যবাহী আমদানি এবং রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। চলতি বছরের মার্চে বন্দরে ৯৮ হাজার ৭৩৬ টিইইউস আমদানি কনটেইনার এবং ৫৫ হাজার ১৬০ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যদিও গত বছরের মার্চে  ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯ টিইইউস আমদানি কনটেইনার এবং ৭৬ হাজার ১৬৬ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল এই বন্দরে। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় কম ছিল আমদানি ও রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এলসি দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে আমদানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অনেক কমেছে। এর প্রভাব সার্বিকভাবে পড়েছে বন্দর-কাস্টমসের ওপর।

চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজও কম ভিড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে ৬৫৫টি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) ভিড়েছে। যদিও ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে ৭২৮টি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) ভিড়েছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আমদানি-রপ্তানি কমেছে। জাহাজের আসা-যাওয়াও কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে কাস্টমস ও  বন্দর ব্যবহারকারী সবার ওপরে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, সার্বিকভাবে মন্দার কারণে আমাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁদেরকে অ্যাসোসিয়েশনের কল্যাণ তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। 
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক, প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আলম বলেন, গত ছয় মাস থেকে আমাদের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের তৎপরতা অনেক কমে গেছে। কাজ কম তাই অনেক গাড়ি অলস বসে থাকতে হচ্ছে। আগে প্রতি মাসে চট্টগ্রাম-ঢাকা ৮ থেকে ৯ ট্রিপ ভাড়া পাওয়া যেত, এখন ৪ থেকে ৫ ট্রিপ ভাড়া পেতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনা সংস্থার ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল কবির রঞ্জু বলেন, আগে একটি লাইটারেজ জাহাজ দিনে ডাবল ট্রিপ মারত। বর্তমানে বছরে ১০/১১ ট্রিপ মারার সুযোগ পাচ্ছে। এতে লাইটারেজ জাহাজের ব্যবসা লাটে উঠেছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত