Ajker Patrika

নাগালের বাইরে যাচ্ছে ডায়রিয়ার স্যালাইন

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
Thumbnail image

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত রোগীর শিরায় প্রয়োগযোগ্য স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কলেরা ও ডায়রিয়া রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে পটাশিয়াম ক্লোরাইড‍, সোডিয়াম অ্যাসিটেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের মিশ্রণযুক্ত স্যালাইন দিতে হয় শিরায়। এ ধরনের প্রতি ব্যাগ স্যালাইন এখন দুই থেকে আড়াই গুণ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি না তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের দাবি, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় সব ধরনের স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যায়।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও বাবুবাজার এলাকার কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, এক থেকে দেড় মাস ধরে বাজারে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওই সুযোগে ৯০-৯২ টাকা দামের ১০০০ মিলিলিটারের এক ব্যাগ স্যালাইন এখন ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালসংলগ্ন মেসার্স এম এস মেডিকেল হলের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফুর রহমান জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় বাজারে সব ধরনের স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখন ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের জন্য স্যালাইন চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতি ব্যাগ ১০০০ মিলির স্যালাইন ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বাড়ায় সব ধরনের স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের স্যালাইন তৈরি তরতে গিয়ে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগের স্যালাইন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে কোথাও কোথাও সরবরাহের সংকট দেখা দিয়েছে।

সূত্রমতে, দেশে কলেরা স্যালাইন তৈরি করছে অপসো স্যালাইন কোম্পানি লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজারে স্যালাইনের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের স্যালাইন তৈরি করতে গিয়ে ডায়রিয়া স্যালাইনের সংকট রয়েছে। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্প্রতি ডাকা হয়েছিল। তাদের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। যাদের দুই শিফটে উৎপাদন হয়, তাদের তিন শিফট এবং প্রয়োজনে বন্ধের দিনেও উৎপাদন অব্যাহত রাখার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

স্যালাইনের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে অপসো স্যালাইন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (বিপণন) মোমিন তালুকদার বলেন, বর্তমানে স্যালাইনের চাহিদা ২০ গুণ বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্যালাইন তৈরি করতে গিয়ে অন্যান্য রোগের স্যালাইন উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। স্যালাইন তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য হলেও যন্ত্রপাতি ও স্থাপনায় বিপুল অঙ্ক অর্থ ব্যয় হয়। রাতারাতি মেশিনপত্র স্থাপন করা সম্ভব হয় না।

তবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবু আজহার বলেন, দেশে ডেঙ্গুর সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) সূত্রে জানা গেছে, তাদের হাসপাতালে বর্তমানে দিনে ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে। তবে তাদের স্যালাইনের সংকট নেই।

অধ্যাপক আবু আজহার বলেন, ‘আগে শুধু মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে স্যালাইন তৈরি করা হতো। কিন্তু এখন কয়েকটি কোম্পানি তা তৈরি করছে, তারপরও কেন বাজারে সংকট তৈরি হলো তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে মজুত করার মতো কোনো কারসাজি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত