Ajker Patrika

১৫ গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
১৫ গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বালচ নদে সেতু না থাকায় দুই ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বালচে নির্মাণ করা হয়নি একটি সেতু। ফলে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় গ্রামবাসীকে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে বালচ নদে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক সরকারি কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বালচ নদে সেতু নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা গেছে, প্রতিদিন উপজেলার কাকৈরগড়া ও বাকলজোড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া, নাগপুর, গোপালপুর, বিলাশপুর, গোপীনাথপুর, সাংসা, গুজিরকোনা গ্রামসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। সাঁকো দিয়ে কোনোরকমে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের।

স্থানীয়রা জানান, সেতু না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ‍্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। নদীর দুই পারে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। ফলে জরুরি অনেক সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গোদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান সেতু নির্মাণ করা হবে; কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজখবর রাখেন না। আমরা অনেক দিন ধরে বালচ নদের ওপর একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছি; কিন্তু আমাদের স্বপ্ন আজ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হলো না।’

নাগপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মিয়া বলেন, ‘সরকার দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন করেছে; কিন্তু আমাদের এলাকার এই সেতু নির্মাণ আর হলো না। আমরা আর কত দিন কষ্ট করব এই সেতুর জন্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আমাদের এই সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।’

গোপীনাথপুরের কৃষক আজিম খাঁ বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্য নিতে দ্বিগুণ খরচ হয়। এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হই।’

দক্ষিণ গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয় আসে। নদীতে বেশি পানি থাকলে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে ভয় পান, যে কারণে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।’

কাকৈরগড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু তালুকদার বলেন, ‘এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে। এখানে পাকা সেতু না থাকায় মানুষ অনেক দুর্ভোগে আছে। বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী ও নারীরা বেশি কষ্ট করছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি সেতু নির্মাণের ব‍্যাপারে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত