Ajker Patrika

বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই উধাও বিদ্যুৎ, ভোগান্তি গ্রাহকের

সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১৫: ৪২
বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই উধাও বিদ্যুৎ, ভোগান্তি গ্রাহকের

সখীপুরের আকাশে মেঘ জমলেই শুরু হয় বিদ্যুৎ বন্ধের প্রস্তুতি। আর বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই বিদ্যুৎ উধাও। এমনকি সন্ধ্যার পর হালকা বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেও সারা রাত বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ। এটি বর্ষাকালের কথা, গ্রীষ্মে বেশি গরম পড়লে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় দেখা দেয় ব্যাপক বিদ্যুৎবিভ্রাট। এ রকম নানা অজুহাতে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে দিনের বেশির ভাগ সময়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ-বিরক্ত গ্রাহক।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এমন বিদ্যুৎবিভ্রাটের জন্য বনের গাছকে দায়ী করছেন স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ। আর গ্রাহকেরা বলছেন, বছরের কয়েকটা দিন গাছ ছাঁটাইয়ের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রায় সারা বছরই চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, বিশেষ প্রয়োজনে অথবা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি হলে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটে সেটা আমরা জানি। কিন্তু প্রতিদিনই ২০ থেকে ২৫ বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়া খুবই বিরক্তিকর। বিদ্যুৎবিভ্রাটের এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না দীর্ঘদিনেও।

উপজেলার লাঙ্গুলিয়া গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক বায়জিদ হাসান বলেন, বিদ্যুৎ এসেছে দেখে কোনো কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রায় সারা দিনই চলে এভাবে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা। এতে বাসার ফ্রিজ টিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানকে ফোন করলে বিদ্যুতের লাইনে গাছ পড়েছে বলে জানানো হয়। অধিকাংশ সময় তাঁরা এ উত্তরটিই দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বনের গাছপালাকে দোষ দিয়ে আর কতকাল এভাবে চলবে! মূলত এটি নিয়মিত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার একটি কারসাজি বলে মনে হয় আমাদের।’

বিদ্যুৎবিভ্রাটের প্রকৃত কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সখীপুর অঞ্চলের নলুয়া, বোয়ালী, শোলাপ্রতিমা লাঙ্গুলিয়া, প্রতিমা বংকী, কালিদাস ও কালমেঘা এলাকার দায়িত্বরত এক লাইনম্যান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ঝড়-বৃষ্টি হলে, গাছপালা পড়লে কিংবা অন্য যেকোনো কারণে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পরিষ্কার করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়াই এ বিভ্রাটের মূল কারণ।

তিনি আরও বলেন, ক্ষয়-ক্ষতি ও দুর্ঘটনারোধে ঝড়-বৃষ্টির আভাস পেলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। ঝড়ের পর লাইনে গাছপালা পড়ে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু অল্প জনবল দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুরো লাইন পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফলে উপসংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে মূল সংযোগ চালু করা হয়। পরে প্রতিটি উপসংযোগ চালু করতে গ্রাহকেরা বিদ্যুৎবিভ্রাটের শিকার হন।

জানতে চাইলে পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) সখীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান ভূঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের সরবরাহ করা লাইনগুলো অনেক লম্বা। ঝড়-বৃষ্টির পর জাম্পারিং কেটে দিয়ে লাইনের একটি অংশ চালু করতে হয়। এভাবে পরবর্তী অংশ চেক করে পুনরায় লাইন চালু করতে হয়। মূলত সরবরাহ লাইনগুলো বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টি হলে এ রকম পরিস্থিতির তৈরি হয়। তবে আমাদের অনেক বিতরণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। তিনি গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত