Ajker Patrika

শ্রমের হাটে ঠকছেন নারী

মো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ)
শ্রমের হাটে ঠকছেন নারী

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে চলতি আলু রোপণ মৌসুম কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসেছে ভাসমান শ্রমিকের হাট। এসব হাটে পুরুষের পাশাপাশি দিনমজুর হিসেবে শ্রম বিক্রি করছেন অনেক নারী। তবে শ্রম বিক্রিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা কম মজুরি পাচ্ছেন। পুরুষেরা দৈনিক ৭০০ টাকা পর্যন্ত পেলেও সেখানে নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

জানা গেছে, অন্তত চার দশক ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকেরা এসে টঙ্গিবাড়ীসহ অন্য উপজেলায় কাজ করেন। বিশেষ করে প্রতিবছর আলু রোপণ ও উত্তোলন, ধান আবাদসহ শুষ্ক মৌসুমে মাটিকাটার কাজের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। এ জন্য উপজেলার আলদি বাজার, বালিগাঁও বাজার, বঘিয়া বাজারসহ কয়েকটি স্থানে শ্রমিক বেচাকেনার হাট বসতে দেখা যায়। চলতি আলু চাষাবাদের মৌসুমে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরা সমানতালে মাঠে কাজ করছেন।

বালিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হাজী দুলাল বলেন, ঐতিহ্যবাহী বালিগাঁও বাজারে ২৫ বছর আগে থেকে ভাসমান শ্রম বিক্রির হাট বসে। এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগ শ্রমিকই উত্তরাংশের জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় থেকে আসেন।

দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রের নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে এনজিও কর্মজীবী নারী। সংগঠনের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী রাজীব আহমেদ বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে পুরুষের মতো অনেক নারী শ্রমিক মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজের জন্য আসছেন। তাঁদের অভ্যন্তরীণ পরিযায়ী শ্রমিক বলা হয়। অনেক স্থানেই তাঁদের থাকা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকে না। যাত্রীছাউনি, বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমাতে হয়। অথচ দেশের অর্থনীতিতে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তাই আমরা সরকারের কাছে অঞ্চল ভেদে এবং মৌসুম অনুযায়ী এই নারী শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ ও আশ্রয়ণ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। তাঁদের জন্য পৃথক যৌন নিপীড়ন আইনও চেয়েছি। কিন্তু সরকার প্রচলিত আইনের বাইরে বিশেষ কিছুতে তেমন আগ্রহী নয় বলেই মনে হয়।’

উপজেলা ঘুরে দেখে গেছে, বিভিন্ন স্থানে শ্রম বিক্রির হাট বসেছে। ভোরে সূর্যের আলো উঁকি দেওয়ার আগেই রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমাতে থাকেন নারী-পুরুষ দিনমজুরেরা।

সাধারণত শ্রমিকেরা ৮-১০ জনের একেকটি দলে ভাগ হয়ে থাকেন।  যিনি বেশি দাম দিতে রাজি হন, তাঁর কাছেই শ্রম বিক্রি করেন।

বালিগাঁও শ্রম বাজারে নারী শ্রমিক সামসুন্নাহর বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর আলু লাগানো ও ওঠানোর সময় এখানে কাজ করতে আসি। আমরা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করলেও মূল্য পাই কম। সকালে কাজে যাই, বিকেল চারটার দিকে কাজ শেষে বাড়িতে আসি।’

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘নারীদের তুলনায় পুরুষ অনেক বেশি কাজ করেন। পুরুষের কাজের গতি নারী শ্রমিকের চেয়ে বেশি। নারীদের দিন প্রতি দেওয়া হয় ৩০০-৪০০ টাকা, আর পুরুষদের দেওয়া হয় ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাসেদুজ্জামান বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একজন শ্রমিককে নিম্নতর বেতন প্রস্তাব করতে পারবেন, কিন্তু কম দিতে পারবে না।  উপজেলা শ্রম দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে ভাসমান শ্রমের বাজারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হবে। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় তবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, নিরাপত্তার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত