Ajker Patrika

তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে

আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১৪: ৫০
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে

শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়েছে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু আদৌ তৈরি হবে কি না, তা নিয়েই একসময় সংশয় দেখা দিয়েছিল। কারণ, বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই সেতু নির্মাণে অর্থসহায়তা দিতে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান ও সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই সম্ভব হয়েছে সব ধরনের বাধাবিপত্তি, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন।  

পদ্মা সেতু অবশ্যই শেখ হাসিনার কৃতিত্ব হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে অনেক কিছুই করেছেন, যার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে। তবে এটাও ঠিক যে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। কথায় আছে, বসতে দিলে শুতে চায়। আমাদের দেশে অনেক মানুষ। অনেক মানুষের সমস্যাও অনেক। একজনের যদি বিলাসিতার উপকরণের সমস্যা, অন্য অনেকের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণেরই ঘাটতি। মানুষের জীবনে সমস্যার শেষ নেই, চাহিদারও শেষ নেই। যখন দুই বেলা পেটপুরে খাওয়া জোটে না, তখন দুমুঠো ডাল-ভাত হলেই বর্তে যায়। কোনোভাবে ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হলে মন চায় একটু মাছ কিংবা একটি ডিম। সেটাও যদি জোগাড় হয়, তখন মাংসের জন্য মন আনচান করে। তবে চেষ্টা থাকলে সবার না হলেও কারও কারও ইচ্ছা পূরণ হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশকে যে অর্থনৈতিকভাবে একটি শক্ত অবস্থানে নিতে পেরেছে, তা যাঁরা স্বীকার করেন না, তাঁরা রাজনৈতিক ভিন্নমতের জন্যই করেন না। সরকারের অর্থনৈতিক নীতির যাঁরা সমালোচক, তাঁরা নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে কী সুফল মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন, তা একবারও ভেবে দেখেন না। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে সুখ ও সমৃদ্ধির বন্যা বয়ে গেছে, তা অবশ্যই নয়। কিন্তু মানুষের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে বললে তা অবশ্যই বাড়িয়ে বলা। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়ে অনেক অসহায় মানুষের হাহাকার কমানোর ব্যবস্থা হয়েছে। গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক লাখ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।

তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে দেশের সব মানুষের সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। সমস্যা আছে, থাকবেও। পৃথিবীতে কোনো দেশের কোনো সরকারই সব মানুষের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না, পারেনি। শেখ হাসিনার সরকারও পারেনি, পারবে না। এই যে পারছে না, সেটা যদি কেউ বলেন, তাও কোনো গর্হিত অপরাধ নয়।

দেশে অন্য যারা শাসন করেছে, তাদের তুলনায় শেখ হাসিনার সরকার খারাপ নয়; বরং ভালো। এটা ঠিক, দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হয়নি। স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, দলবাজি, লুটপাট কোনোটাই শেষ হয়নি। এখানে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সব অব্যবস্থার অবসান কামনা করাও কি ঠিক? আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক দর্শন বিএনপি-জাতীয় পার্টি থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আমাদের দেশের বড় সব রাজনৈতিক দল মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং অন্য দলগুলোর নেতৃত্বের শ্রেণিগত অবস্থানেও আলাদা বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই দলের ভেতরে বাম ও ডান প্রবণতার দ্বন্দ্ব আছে।

বঙ্গবন্ধুর সময় যেমন তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর মতো অগ্রসরমনা নেতা ছিলেন, তেমনি খন্দকার মোশতাক, শাহ্ মোয়াজ্জেম, ওবায়দুর রহমান, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের মতো রক্ষণশীল-ডান ধারার উপস্থিতিও কম ছিল না। এখনো শেখ হাসিনার পাশে উভয় ধারার মানুষই আছেন; বরং সুবিধাবাদী ধারাই হয়তো জোরদার। শেখ হাসিনার একক চেষ্টায় দলে যে ভারসাম্য দৃশ্যমান, তা খুবই দুর্বল। শেখ হাসিনার পক্ষে দেশের ভেতরে নাগরিক সমাজের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর শোনা না গেলে আওয়ামী লীগের কাছে শুধু ভালো প্রত্যাশা করা যথাযথ নয়।

মনে রাখতে হবে, ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগকে বিএনপি-জামায়াতের মতো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে সমানে সমান লড়তে হলে শুধু আদর্শের ওপর নির্ভর করলে চলে না, রাজনৈতিক কৌশলও গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা কৌশলের খেলায় এগিয়ে আছেন, আদর্শের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে। প্রশ্ন হতে পারে, এটা কি ঠিক? রাজনীতির সঙ্গে যদি শুধু আদর্শের বিষয়টি যুক্ত থাকত, তাহলে সহজেই বলে দেওয়া যেত—না, এটা ঠিক নয়। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে ক্ষমতার বিষয়টিও যেহেতু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই বলতে হয়, শেখ হাসিনা ঠিক পথেই আছেন। ক্ষমতার বাইরে থেকে কিছুই করা যায় না।

যাঁরা আওয়ামী লীগের পরিবর্তন আশা করেন, তাঁরা কী একইভাবে বিএনপি বা আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির রাজনৈতিক নীতি-কৌশলেরও পরিবর্তন আশা করেন? যদি করেন, তাহলে তো অতীত ভুলত্রুটির জন্য দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগের খারাপের বিপরীতে বিএনপি কী কী ভালো করতে চায়, কীভাবে করতে চায়, সেটাও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া দরকার। ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন করবেন, বিদ্যুতের বদলে খাম্বা দেবেন, সার চাইলে বুকে গুলি ছুড়বেন আর আওয়ামী লীগের গিবত গাইবেন, তাহলে মানুষের মনে আস্থা তৈরি হবে কীভাবে?

পদ্মা সেতুতে বিএনপির লোকজন ক্ষমা চেয়ে চলাচল করতে পারবেন—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ওনারা কি ওইটা (পদ্মা সেতু) ওনাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বানিয়েছেন, নাকি আমাদের সবার পকেটের টাকা দিয়ে বানিয়েছেন? আমাদের পকেটের টাকা কেটে নিয়েছেন এবং ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন চুরি করে। কাজেই এই সমস্ত কথাবার্তা তাঁদের মুখে শোভা পায় না।’

সংগত প্রশ্ন। কোনো সরকারই পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে দেশের কোনো স্থাপনা তৈরি করে না। সব অর্থই জনগণের। বিদেশি ঋণ হলেও তা শোধ করতে হয় জনগণের টাকায়। তবে তারপরও কথা থাকে। বিএনপির আমলে কি পৈতৃক টাকায় কোনো কিছু হয়েছিল? তারেক এবং তাঁর সঙ্গীসাথিরা অর্থ লোপাট করেছিল কোন তহবিল থেকে? পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করার প্রস্তাবেরও বিএনপি বিরোধিতা করেছে এটা বলে যে সেতু তাঁর বাবার টাকায় তৈরি হয়নি। এখানে প্রশ্ন, কোনো স্থাপনার নামকরণে যদি ‘বাবার টাকা’র প্রশ্ন আসে তাহলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হয়েছিল কোন যুক্তিতে? তিনি কি এই বিমানবন্দর নির্মাণে তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি বিনিয়োগ করেছিলেন?  
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আওয়ামী লীগ থেকে দূষিত রক্ত বের করে দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছেন, ভালো আচরণ করে মানুষকে খুশি করতে হবে, তা না হলে শেখ হাসিনার এত সাফল্য, অর্জন ও উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগে দূষিত রক্ত ঢুকেছে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক যে বুঝতে পেরেছেন, এটা একটি ভালো দিক। দলকে দূষিত রক্তমুক্ত করার কাজটি কিন্তু মূলত তাঁরই। তিনি আন্তরিকভাবে চাইলেই শুধু দলে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন সম্ভব। ভালো আচরণ করে মানুষকে খুশি করার যে কথা ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তা-ও তাৎপর্যপূর্ণ। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতা-কর্মীর আচার-আচরণ এতটাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ যে অনেকেই তাদের ওপর ত্যক্তবিরক্ত। মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ করা যেকোনো রাজনৈতিক কর্মীর জন্য মারাত্মক অপরাধের মতো। রাজনীতি তো মানুষের জন্য। মানুষকে কাছে না টেনে দূরে ঠেলার মানসিকতা থাকলে ভালো রাজনৈতিক কর্মী হওয়া যায় না।

শেষে আবারও পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ। এই সেতু নির্মাণে কারা বাগড়া দিয়েছেন, কারা বিদেশে গিয়ে কার কান ভারী করেছেন, কে এই সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানোয় চলাচলের সময় ভেঙে পড়বে বলে কটূক্তি করেছেন, তা এখন আর মনে করার দরকার নেই। হৃদয় খুঁড়ে বেদনা না জাগানোই ভালো। নিন্দুক বা সমালোচক সব সমাজেই আছে, থাকে। সমালোচকেরা যত কড়া বা তিতা কথাই বলুক না কেন, তাতে মন খারাপের কিছু নেই। কাউকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দিয়ে দুটা চুবানি দিয়ে মরার আগে উঠিয়ে এনে কিছু ‘শিক্ষা’ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আনন্দের দিনে, উদ্‌যাপনের দিনে কষ্টের কথা মনে না করে বরং সবাইকে আনন্দে শরিক হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোই উত্তম। শেখ হাসিনা অতীতে উদারতা ও মানবিকতার একাধিক নজির রেখেছেন। কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে উপস্থিত হয়ে আমাদের বৈরিতার রাজনীতির গোড়ায় সুবাতাস ছড়িয়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনও বিএনপিকে উপস্থিত থাকার জন্য শুধু কাগুজে আমন্ত্রণ না জানিয়ে কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে উপস্থিত করার উদ্যোগ নিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনোভাবেই ছোট হবেন না; বরং তাঁর উদারতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। দেশের রাজনীতিতে পরস্পর দোষারোপ ও বিষোদগারের যে ধারা চলছে তাতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে। আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। মনে রাখতে হবে: উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সঙ্গে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।

বিভুরঞ্জন সরকার, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

 

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

আজকের রাশিফল: মুখটা সামলে রাখুন, শত্রুরা ফেসবুক পোস্টে প্রচুর হা হা দেবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত