Ajker Patrika

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য

এ আর চন্দন, ঢাকা
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য

যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর তখন দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যস্ত। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার পরপরই সেই নৌবহরকে সতর্ক করে দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকির মুখে শেষ পর্যন্ত সেটি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

এ ছাড়া রণাঙ্গনে ততক্ষণে পাকিস্তানি সেনাদের পলায়নপর্ব শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একাংশ আগের দিন লালদীঘি বাজার এলাকায় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে রংপুর ও দিনাজপুর অন্যান্য স্থান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

৮ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর একটি ব্রিগেড যাত্রাপথের সব বাধা গুঁড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে পলাশবাড়ী মুক্ত করে। পাকিস্তানিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাবোঝাই জিপের একটি কনভয় রংপুর থেকে পীরগঞ্জের দিকে যেতে চাইলে লালদীঘি বাজারে মিত্র বাহিনীর ট্যাংকগুলো শত্রু ধ্বংসের উল্লাসে মেতে ওঠে। যৌথ বাহিনীর অন্যরাও পাকিস্তানিদের ওপর প্রবল গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর ওই কনভয়ে ছিলেন মেজর জেনারেল নজর হুসেন শাহ। বিরাট বপু জেনারেল তেমন নড়াচড়া করতে পারতেন না। তিনি কোনো রকমে জিপ থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্ধকারে কতগুলো বাঁশের আড়ালে গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন।

পরে অবস্থা বুঝে সেখান থেকে ওঠে গ্রামে এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। (সূত্র: মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে) যৌথ বাহিনী এদিন কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর দখল করে। এরপর ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলে। ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লে. জেনারেল অরোরা দুপুরে কুমিল্লা বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করেন। চাঁদপুরে ভারতীয় বিমান হামলায় হানাদার বাহিনীর বহু নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিত্র বাহিনী ঝিনাইদহ থেকে এগিয়ে গিয়ে মাগুরা মুক্ত করে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুক্ত করে 

সিলেট শহর, খাদিমনগর ও শ্রীমঙ্গল। একদল ঘাঁটি গাড়ে জামালপুর শহরের দক্ষিণে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে রামগড় মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী। (সূত্র: যুগান্তর, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১)

ভারতীয় বাহিনীর একটি ব্রিগেড হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহের দিকে এগিয়ে যায়। এদিন হানাদারমুক্ত হয় বরিশাল ও পিরোজপুর। 
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এদিন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য। পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেওয়া।’ মুজিবনগর থেকে দেওয়া এক বেতার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও বলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানি হানাদারেরা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে।’

যশোরে এদিন বাঙালিরা যে উল্লাস প্রকাশে ব্যস্ত ছিলেন তার বর্ণনায় মার্কিন সাংবাদিক সিডনি শনবার্গ লিখেছেন, ‘বাসের ছাদে বাঙালিরা নৃত্যপর। রাস্তায় তারা স্বাধীনতার স্লোগান দিচ্ছে। পরস্পর আলিঙ্গন করছে, উল্লাসধ্বনি দিচ্ছে এবং বিদেশি দেখলে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ প্রকাশের জন্য এগিয়ে এসে হাত চেপে ধরছে।’ (ডেটলাইন বাংলাদেশ: নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান) 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত