Ajker Patrika

খরায় সেচসংকট, বিপাকে চাষি

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৩৭
Thumbnail image

খরায় খাল, জলাশয় ও পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এ জন্য দাকোপে ফসল উৎপাদনে সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন বোরো ধান ও তরমুজচাষিরা। লোকসানের আশঙ্কায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর দাকোপে দ্বিগুণেরও বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। ভালো ফলন ও লাভ বেশি পাওয়ায় এবার চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টরে।

বোরো ধান চাষ হয়েছে ২১৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া তিল ৩ হেক্টর, মুগডাল ৪, ভুট্টা ৪, বাঙ্গি ১৫ ও শাকসবজি ৫০ হেক্টরে চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রচণ্ড খরার কারণে পানির উৎস খাল ও পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজের খেতে সেচ দিতে পারছেন না এলাকার হাজারো কৃষক।

সরেজমিনে একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমনের পর রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় তরমুজ চাষে। ১ বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি। কৃষকেরা দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিবছর এর আবাদ বেড়েই চলেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমিতে তরমুজগাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু করেছে। কিছু খেতে আবার তরমুজ বড় হয়ে উঠেছে। প্রথম দিকে অনেকে মাঠের ছোট ছোট কুয়ো থেকে খেতে সেচ দিলেও সেসব পানির উৎসগুলো এখন শুকিয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষক পাম্প ও লম্বা পাইপ দিয়ে দূরের খাল থেকে সেচ দিলেও সেখানেও এখন আর পানি নেই বললেই চলে।

ধোপাদি এলাকার কৃষক গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ধান ও তরমুজের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে তিনি মাঠে ছোট ছোট কুয়ো কেটে খেতে সেচ দিয়েছেন। এখন সেখানে পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে। তা ছাড়া খরার কারণে খালগুলোর পানিও সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে।

বর্তমানে কলসিতে করে পানি নিয়ে গাছের গোড়ায় এক মগ করে পানি দিয়ে কোনো রকমে গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেচের পানির অভাবে ফল ভালো হবে না, গাছও মরে যেতে পারে। এতে তাঁর ব্যাপক লোকসান হতে পারে। আর লোকসান হলে ধারদেনা ও ঋণ শোধ করতে না পারলে তিনি পথে বসবেন বলে জানান।

কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক সিন্ধু রায় ও দাকোপ এলাকার সমাজসেবক সুকল্যান রায় জানান, উপজেলার সব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশির ভাগ সরকারি খাস খাল, জলাশয়গুলো অবৈধ দখলদার ও ইজারাদারেরা ঘনঘন টোনাজাল, নেটপাটা দেওয়ার কারণে পলি পড়ে গভীরতা কমে যাওয়ায় খাল ও ব্যক্তিগত পুকুরগুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে তরমুজ ও ধানখেতে সেচের পানির তীব্র সংকট চলছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অনেক স্থানে পানি নিয়ে ঝগড়া বিবাদও লেগে আছে।

উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা মেহেদি হাসান খান বলেন, মাঠের খাল ও জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে গভীরতা কমে যাওয়ায় পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানিতেও লবণ থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকেরা।

মেহেদি হাসান খান আরও বলেন, বেশকিছু খাল খননের জন্য বিএডিসিকে প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। সব খাল খনন করতে পারলে সেচের পানিসংকট কিছুটা লাঘব হবে। তা ছাড়া প্রত্যেক কৃষক নিজ নিজ জমিতে মিনি পুকুর কেটে নিলে সেচ দিতে ভালো হয়। এ ছাড়া ড্রিপ সেচ, বারিড পাইপ এ ধরনের আধুনিক সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে পানিরও অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত