Ajker Patrika

ভৈরবপাড়ের মাটি বিক্রি ইটভাটায়

চৌগাছা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ০৯
ভৈরবপাড়ের মাটি বিক্রি ইটভাটায়

জোয়ারাধার তৈরির জন্য দুই বছর আগে যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদ খনন করে সরকার। সে সময় খনন করা মাটি দিয়ে নদের দুই তীরে বাঁধ দেওয়া হয়, যেন বর্ষায় নদের পানি উপচে মাঠের ফসলের ক্ষতি না হয়। কিন্তু সেই বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল বুধবার মাটিকাটা যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা। তবে মাটি কাটা বন্ধ রাখা হলেও এক্সকাভেটর সরিয়ে নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ দিকে মাটি কেটে কৃষকের জমির ওপর দিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে এক দিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ভৈরব খনন করে জোয়ারাধার (টিআরএম) সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ হুমকিতে পড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১০টার দিকে উপজেলা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের চৌগাছা-আড়পাড়া সড়কের রোস্তমপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায় একটি স্কেভেটর মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে ইটভাটার ট্রলিতে ভরে দিচ্ছেন। আর ৭–৮টি ট্রলিতে করে সেই মাটি ফসলি জমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাকটর যাওয়া–আসায় রাস্তায় উঠতে গিয়ে চৌগাছা-আড়পাড়া সড়কের একটি অংশ ভেঙে গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক মাটি কাটতে বাঁধা দেওয়ায় গ্রামের মোমিনুর রহমান তাঁদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় মোমিনুরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘পাতিবিলা গ্রামের সিদ্দিক এই মাটি কাটাচ্ছেন। মাটি তো সিদ্দিকের না, নদের। এভাবে নদের মাটি কেটে নেওয়া ঠিক হচ্ছে না।’

অন্যদিকে এক্সকাভেটরের চালক সকালে যেখানে মাটি কাটছিলেন সেখান থেকে কিছু দূরে গিয়ে মাটি কাটার চেষ্টা করতে থাকেন। চালকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি ঢাকা বাসিন্দা। গ্রামের মোমিনুর তাঁকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন।’ তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

‘এটা তো মোমিনুরের জমি নয়, নদের জমি আপনি কাটছেন কেন’–এমন প্রশ্ন শুনে আর কোনো জবাব না দিয়ে চুপ থাকেন এক্সকাভেটর চালক। এ সময় নাম প্রকাশ না করে মাঠে থাকা কয়েকজন কৃষক বলেন, যারা মাটি কেটে নিচ্ছেন তাঁরা আমাদের নানাভাবে বোঝাচ্ছেন এই মাটি নিয়ে গেলে কোনো অসুবিধা হবে না।’

এক কৃষক বলেন, ‘এভাবে মাটি কেটের নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের জমির ক্ষতি হচ্ছে। আমরা তাঁদের নিষেধ করলেও প্রভাবশালী হওয়ায় বাঁধা দিতে পারছি না। তাঁরা আমাদের বলছেন আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি।’

কৃষকেরা জানান, জলাধার তৈরির লক্ষ্যে বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দুই বছর আগে ভৈরব খনন নদ খনন করে সরকার। সে সময় খনন করা মাটি দিয়ে নদের দুই তীরে বাঁধ দেওয়া হয় যেন নদের পানি উপচে মাঠের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেলা ১১টার দিকে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মোবাইল ফোনে মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে নদের মাটি কাটতে নিষেধ করেন। ইউএনওর আদেশে তাঁরা সেখান থেকে সরে গেলেও স্কেভেটর সরিয়ে নেননি। স্থানীয়রা বলছেন, রাতের আঁধারে আবারও মাটি কাটার জন্য তাঁরা স্কেভেটর সরাননি।

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে এভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে দেয় চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবুও মাটি চুরি থামেনি।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ড্রামট্রাক জব্দ করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়েছিলেন এভাবে আর মাটি কাটবেন না। নতুন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত