Ajker Patrika

স্কুলে জোড়াতালির পাঠদান

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৩
Thumbnail image

রাঙামাটি জেলায় ২০১২ সালে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। কিন্তু দক্ষ কোনো শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি। এ কারণে এসব বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকেরাই পাঠদান করছেন। তা ছাড়া অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন হয়নি। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১০ কিলোমিটারের আশপাশে মাধ্যমিকবিহীন এলাকা চিহ্নিত করে রাঙামাটি জেলায় ২০১২ সালে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করা। এসব বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও এসব বিদ্যালয়ের জন্য আলাদা শিক্ষকসহ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙামাটি সদর উপজেলার একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাধ্যমিকে উন্নীত করা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খারাপ করছে। এর অনেক কারণ আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিকে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মাত্র। অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য দক্ষ কোনো শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি। প্রাথমিকে যে অবকাঠামো, সে অবকাঠামো দিয়েই চলছে বিদ্যালয়গুলো। প্রাথমিকের যে শিক্ষক, সে শিক্ষকই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

শিশুরা পঞ্চম শ্রেণি পার হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে যাওয়ার পর ভিন্ন পরিবেশ প্রত্যাশা করে। কিন্তু এদের জন্য আলাদা কোনো পরিবেশ ও অবকাঠামো নির্মাণ না করায় পড়াশোনার পরিবেশ পাচ্ছে না ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।

শুকরছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী হৈমন্তী চাকমা বলে, ‘আমাদের কক্ষসংকট আছে। বসতে কষ্ট হয়। বেঞ্চগুলো শিশুদের জন্য করা। আমাদের জন্য কোনো বেঞ্চ তৈরি করা হয়নি। আমাদের কমনরুম দরকার। কিন্তু নেই। আমাদের জন্য আলাদা কোনো টয়লেট নেই। শিক্ষক না থাকায় আমাদের ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা বলছেন, বারবার আবেদন করার পরও এ সংকট থেকে উত্তরণের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না শিক্ষা বিভাগ। ফলে কষ্ট করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানেরা।

রাঙামাটি সদর উপজেলার শুকরছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ কালিম উল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়গুলো শুধু নিম্নমাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে আসার সময় ছাত্রীদের পোশাক ভিজে যায়। এই পোশাক বদলানোর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তাদের জন্য আলাদা কক্ষ না থাকায় তারা অসুবিধায় পড়ে। ভবন না থাকায় তাদের জন্য আলাদা কক্ষ দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের জন্য ভিন্ন পরিবেশ প্রয়োজন।

লংগদু উপজেলার চাল্যাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘সাতজন শিক্ষকের বিপরীতে আমরা ক্লাস নিচ্ছি চারজনে। আমাদের পাঠদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ছেলে-মেদের জন্য বসার জায়গা দিতে পারছি না। এলাকার অভিভাবকেরা নিজেদের টাকায় শিক্ষক রেখেছেন। কিন্তু এভাবে কয়দিন চলবে। এ জন্য সরকারকে ভাবতে হবে। এভাবে বিদ্যালয়গুলো চলতে পারে না।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এসব বিদ্যালয়ের এ সংকট দূর করতে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ না নেওয়ায় এ সমস্যা লেগেই আছে। বিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় আট বছর ধরে সংযুক্তি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, যেগুলো নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে, সেগুলোর কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত