Ajker Patrika

ব্রিকসের প্রতি আমাদের পক্ষপাতিত্ব স্বাভাবিক

ড. মইনুল ইসলাম
ব্রিকসের প্রতি আমাদের পক্ষপাতিত্ব স্বাভাবিক

২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেন। এবারের সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বাধানোর দায়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে যোগ দেননি। তাঁর জায়গায় রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। এতে সম্মেলনের গুরুত্ব কিছুটা খর্ব হয়েছে। বাংলাদেশ ব্রিকস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের’ শেয়ারহোল্ডার সদস্য। খোদ ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে, কিন্তু এ ব্যাপারে ব্রিকসের পাঁচ সদস্যের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় বাংলাদেশকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। সদস্য হওয়ার আবেদন করার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কারণ, ব্রিকস প্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের তল্পিবাহী আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের দাদাগিরির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসী প্রয়াস হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে।

ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য ২২ দেশ আবেদন করলেও ৬টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, বাকি দেশগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারত মনে করছে, সদস্যসংখ্যা বাড়লে ব্রিকসে চীনের আধিপত্য আরও বেড়ে যাবে। প্রধান দুই সদস্যদেশের মধ্যে এহেন বিশ্বাসের ঘাটতি ব্রিকসের জন্য বিপজ্জনক। এমনিতেই এই দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বৈরিতা ব্রিকসের অগ্রগতিকে অনেকখানি থমকে দিয়েছে।

 ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই ব্রাজিলের ফোর্টালেজা নগরীতে ব্রিকস দেশগুলো যখন তখনকার ‘ব্রিকস ব্যাংক’ বা বর্তমান ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল, তখন ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আমি একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছিলাম। ব্রিকস শব্দটি বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ ও ব্যবসা-গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান-স্যাকসের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিলের প্রবর্তিত একটি টার্ম, যা তিনি উদ্ভাবন করেছেন ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না ও সাউথ আফ্রিকা—বিশ্বের এই পাঁচটি দ্রত-উত্থানশীল অর্থনীতির ইংরেজি নামের আদ্যাক্ষরের সমন্বয়ে। এই পাঁচটি দেশ বিশ্বের আয়তনের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত, এগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ এবং বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ এই পাঁচটি দেশ উৎপাদন করছে। এগুলোর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুটো দেশ ভারত ও চীন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশ রাশিয়া। এই দেশগুলোর কোনোটাকেই মাথাপিছু জিডিপির বিবেচনায় উন্নত দেশ বলা যাবে না, যদিও চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি এবং এখানকার জনগণের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত দ্রুতবর্ধনশীল। ভারতের মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের মতো, তাই ভারতকে এখনো একটি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ বলা যায়। মাথাপিছু জিডিপির বিচারে এই পাঁচটি দেশ ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হলেও বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গত তিন দশকের ধারাবাহিকতায় ব্রিকস গঠনকারী দেশগুলো চমকপ্রদ সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধোত্তর আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থানে চলে এসেছে।

ক্রয়ক্ষমতা সাম্যের (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটিস বা পিপিপি) ভিত্তিতে চীনের জিডিপি ২০১৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ভারতও ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তার মানে পিপিপি পদ্ধতিতে ব্রিকসের অবদান বিশ্বের জিডিপির ৪৫ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে বলে প্রাক্কলিত হয়েছে। তাই এই জোটটিকে বিশ্ব অর্থনীতির নব্য পরাশক্তি অভিহিত করলে অত্যুক্তি হবে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিকস দেশগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার প্রয়াস চলছে এবং তৃতীয় বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশও তাদের নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস শহরে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুসারে নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় মার্কিন-নেতৃত্বাধীন উন্নত, শিল্পায়িত দেশগুলো যেভাবে উপনিবেশ-উত্তর উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং গ্যাট ও এর উত্তরসূরি ডব্লিউটিওর মাধ্যমে প্রচেষ্টা জোরদার করে চলেছে, ব্রিকসের নেতৃত্বে এখন তৃতীয় বিশ্ব তার বিরুদ্ধে প্রায়ই সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। এই নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘আধিপত্য-পরনির্ভরতা তাত্ত্বিক কাঠামোর’ অনুসারী অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতির তত্ত্বগুলো পুঁজিবাদী কেন্দ্রগুলো কীভাবে তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তীয় দেশগুলো থেকে পুঁজি পাচারের নানা মেকানিজমকে ব্যবহার করে চলেছে, তার বিশ্লেষণ উপস্থাপন করছে। ফলে আফ্রো-এশীয় ও লাতিন আমেরিকার জনগণের মধ্যে গত পাঁচ দশকে এ বিষয়টি সম্পর্কে গভীর সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিংশ শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকের প্রতিবিপ্লবের জোয়ারে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক-দাবিদার রাষ্ট্রগুলোর পতন ঘটেছে, তবু প্রান্তীয় অবস্থানের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী কেন্দ্রগুলোয় পুঁজির পাচার ঠেকাতে হলে নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আগ্রাসনকে রুখতেই হবে—এই চেতনাটুকু প্রবলভাবে সঞ্চারিত হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বের জনমানসে। এই চেতনার কারণেই লাতিন আমেরিকার নয়টি দেশে বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে—ব্রাজিল, মেক্সিকো, পেরু, চিলি, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, উরুগুয়ে ও নিকারাগুয়ায় এখন বামপন্থী সরকার ক্ষমতাসীন। সমাজতান্ত্রিক কিউবায় ১৯৫৯ সাল থেকেই বামপন্থী সরকার টিকে আছে মার্কিন অবরোধ সত্ত্বেও।

অন্যদিকে, বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকেই ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির’ ছদ্মবেশধারী বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিশ্বে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগ্রাসী তৎপরতাকে জোরদার করার প্রয়াস সত্ত্বেও ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর পুঁজিবাদী দেশগুলোতে চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটানো ক্রমেই কঠিন হয়ে চলেছে। ব্রিটেনের ‘থ্যাচারিজম’ এবং মার্কিন ‘রেগানোমিকস’কে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ তৎপরতা বলা হয়। এই তৎপরতার অংশ হিসেবেই ১৯৭৯ সালে ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ প্রণীত হয়েছিল মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (অর্থ মন্ত্রণালয়), আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে। (১৯৮৯ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ উইলিয়ামসন এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতাকে ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’ নামে অভিহিত করেন)। এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমেই এগিয়ে চলেছে উন্নয়নশীল বিশ্বে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রচলনের হাতিয়ার হিসেবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে অপব্যবহারের সাম্রাজ্যবাদী খেলা। ১৯৭৯ সালেই বাংলাদেশ এই আগ্রাসনের জালে আটকা পড়েছিল। ওই সময়টাতে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসে প্রতিবছর মারাত্মক ঘাটতি হতো। এ দেশের রপ্তানি আয় দিয়ে ওই বছরগুলোতে আমদানি ব্যয়ের ৩০-৩২ শতাংশের বেশি মেটানো যেত না, ফলে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ওপর অর্থনীতির নির্ভরশীলতা ছিল মারাত্মক, জিডিপির ১০-১২ শতাংশ। (১৯৮১-৮২ অর্থবছরে জিডিপির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল ওই বৈদেশিক ঋণ ও খয়রাতনির্ভরতা)। তাই বাধ্য হয়ে জিয়াউর রহমানের সরকারকে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি বা ইএফএফ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য। ১৯৮০ সালে ওই ঋণ অনুমোদন করা হলেও ঋণের সঙ্গে বিরাট একটা শর্তের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই শর্তগুলো এতই কঠোর ছিল যে জিয়াউর রহমানের সরকার ওগুলো পূরণে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করে। ফলে ঋণের প্রথম কিস্তির ২০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার পর আইএমএফ রুষ্ট হয়ে বাকি ৭৮০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিল করে দিয়েছিল। পরে ১৯৮২-৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ওই সব শর্তের অনেকগুলো পূরণ করা হয়েছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই শর্তগুলোকে ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ অভিহিত করে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণ পাওয়ার প্রায় অভিন্ন শর্তাবলিতে রূপান্তরিত করেছে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো চার দশক ধরে এই দুটো সংস্থা থেকে যত ঋণ নিয়েছে তার সবগুলোতেই শর্তগুলো জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রাইভেটাইজেশন, ডিরেগুলেশন, লিবারালাইজেশন ও গ্লোবালাইজেশন—এই চারটি ডাইমেনশনে অর্থনীতির ওপর ব্যক্তি খাতের নিয়ন্ত্রণকে যথাসম্ভব নিরঙ্কুশ করা এবং রাষ্ট্রের ভূমিকাকে ক্রমান্বয়ে সংকুচিত করার এই মতাদর্শিক জবরদস্তি তৃতীয় বিশ্বের সচেতন জনগণের মধ্যে ক্রমেই প্রতিরোধের আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রীরা এখনো আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের অপমানজনক শর্তাধীন ঋণ পাওয়াকে তাঁদের বাহাদুরি হিসেবে জাহির করে চলেছেন। এখন বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা জিডিপির ১ শতাংশের নিচে নেমে গেলেও তাঁরা এই বদখাসলত ছাড়তে পারছেন না! বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের নিষ্ঠুর দাদাগিরির প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছিল পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিলের নাটকটায়, নিজেদের অর্থায়নে ওই সেতু বানিয়ে আমরা তার জবাব দিয়েছি। অতএব, ব্রিকসের প্রতি আমাদের পক্ষপাতিত্ব থাকাই স্বাভাবিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত