Ajker Patrika

রাতে-দিনে ডুবছে দুবার

বাগেরহাট ও পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ১৪: ১২
Thumbnail image

কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানিতে রাতে ও দিনে দুবার ডুবছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী জেলেপল্লি। ডুবা-জাগা ও ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে জেলেপল্লির ১৫০ পরিবার। তাদের বাড়িঘর রক্ষায় নেই টেকসই বেড়িবাঁধ।

এদিকে পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার প্লাবিত হচ্ছে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরে মাঝিডাঙ্গা এলাকায় গড়ে ওঠা খানজাহান আলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন।

কপোতাক্ষ নদের তীরে খুলনার রাড়ুলী জেলেপল্লির মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রায় ২০০ বছর আগে বসতি স্থাপন করেন এখানে। কপোতাক্ষপাড়ে জেলেপল্লিতে আমরা প্রায় ৫০০ পরিবার বাস করতাম। কিন্তু ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ৩৫০ পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে।’

একই এলাকার বাবুরাম বিশ্বাস (৫৫) বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদ তিনবার ঘর ভেঙেছে আমার। বর্তমান ঘরটি ভেঙে যাওয়ার পথে। নদে রান্নাঘর চলে গেছে। থাকার ঘরটি টিকে থাকলেও সেটি নদের কিনারায় ঝুলছে। জোয়ারের পানিতে রাত-দিন দুবার ডুবছে আমাদের ঘরবাড়ি। জোয়ারের সময় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভয়ে রাত জেগে বসে থাকি। দুপুরে রান্না হয়নি। ভাটায় পানি সরে গেলে রান্না হবে।’

রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াস হোসেন জানান, ভাঙনরোধে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ভাঙনের বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি। বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছেন।

পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরে মাঝিডাঙ্গা এলাকায় গড়ে ওঠা খানজাহান আলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা। প্রতিদিন দুপুরে এবং মাঝরাতে পানিতে ঘরবাড়ি ভাসছে তাঁদের। পানিতে রান্না-বান্না বন্ধ রাখতে হচ্ছে অনেকের। বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র—তিন মাসই জোয়ারের পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সমস্যা সমাধানের টেকসই বাঁধ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার ২৫০টি পরিবার।

১৯৯৭ সালে তৈরি খানজাহান আলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকে ৬০টি ভূমিহীন পরিবার বাস করে। এ ছাড়া আশ্রয়ণকেন্দ্রের আশপাশে আরও ২০০ পরিবার রয়েছে। সবার একটাই দাবি—স্থায়ী ও উঁচু বেড়িবাঁধ স্থাপনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা।

আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দা তোফাজ্জেল শেখ বলেন, ‘নদের পাড়জুড়ে মাত্র ৫০০ মিটার বাঁধের অভাবে আশ্রয়ণ ও স্থানীয়দের প্রতিবছর জোয়ারে ডুবতে হয়। স্রোতে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকটও দেখা দেয় আমাদের এখানে।’

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বেড়িবাঁধের বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।’

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের সময় সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়ণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মূলত বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে জোয়ারের পানি আটকানোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত