Ajker Patrika

ফোন দিলেই মেলে সাহায্য

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
ফোন দিলেই মেলে সাহায্য

পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর জাহান। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় দিনাতিপাত করছেন তিনি। দিনমজুর স্বামী আবদুস সালামের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আবদুস সালাম বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অভাবের জ্বালায় ষাটোর্ধ্ব নুর জাহান একটি বিশেষ মোবাইল ফোন নম্বরে কল করেছিলেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যে নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক টিম নুর জাহানের জন্য নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা উপকরণ নিয়ে হাজির হয়।

এভাবে নুর জাহানদের মতো উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও পটিয়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত মানবিক সহায়তা প্রদান করে নজির সৃষ্টি করেছে নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন। অর্থসহায়তার পাশাপাশি তারা প্রতিদিন দিয়ে যাচ্ছে বস্ত্র, খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী।

নুর জাহান জানান, দীর্ঘদিন তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। চিকিৎসা খরচ চালানোর সক্ষমতা তাঁর পরিবারের নেই। প্রতিবেশী এক যুবকের সহায়তায় নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি এ সহায়তা পান। তিন বছর আগে আমেরিকাপ্রবাসী ও সাবেক মেধাবী ছাত্রনেতা ড. জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন নিজের দাদার নামে প্রতিষ্ঠা করেন নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানবিক সহায়তাকাজে সম্পৃক্ত প্রায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক।

নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জুলকারনাইন চৌধুরীর বাড়ি উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নে। তিনি আবু বক্কর চৌধুরীর ছেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা জুলকারনাইন ১৫ বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পরে তিনি প্রাণরসায়ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০২০ সালে করোনার সময় অসহায় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ও মাংস বিতরণের মাধ্যমে এই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়।

প্রথম দিকে শুধু কুসুমপুরা ইউনিয়নে কার্যক্রম চললেও প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীকালে পুরো পটিয়ায় তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করে। যাত্রার শুরু থেকে এ পর্যন্ত পুরো পটিয়ায় সামাজিক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষকে খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষাসহায়তা, মাংস বিতরণ এবং প্রায় ২০০ পরিবারকে গৃহনির্মাণসামগ্রী বিতরণ করে নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন।

প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করেছে। এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন উৎসবেও বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে।

নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক নজরুল ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০০ জনকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে অসচ্ছল পরিবার, মানবেতর জীবন যাপন করা ব্যক্তিদের দেওয়া হয় অর্থসহায়তা ও খাদ্যসামগ্রী, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় শিক্ষাসামগ্রী। রোগে আক্রান্তদের অর্থসহায়তার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে চিকিৎসাসামগ্রীও।

কুসুমপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম জানান, নজির আহমদ ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড পুরো উপজেলায় বিস্তৃত।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল মামুন জানান, এ মানবিক কাজ অব্যাহত থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করা হবে।

নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের সহায়তা নম্বর ০১৮১৭৭৪০৪৩৫। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিলে যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত