Ajker Patrika

‘ভোটে জিতে খোঁজ নেন না’

জাহিদ হোসেন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
‘ভোটে জিতে খোঁজ নেন না’

‘জন্মের পর থাকি এখানে কখনো কাঠের সাঁকো আবার কখনো বাঁশের সাঁকো দেখে আসতেছি। সেটিও করা হয় এলাকার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রম এবং নিজস্ব অর্থায়নে। প্রত্যেক বছরে দুবার করে করা হয় সংস্কার। তখন কেউ পাশে থাকেন না। তবে ভোটের সময় হলেই প্রার্থীরা ফেরেশতা হয়, অবতরণ করেন বুড়াইল নদীর এই সাঁকোর পাড়ে।

সুন্দর সুন্দর কথা বলেন তাঁরা। ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তাদের কথায় মুগ্ধ হয়। ভোট দিয়ে স্বপ্ন দেখি এবার হয়তো আমাদের চলাচলের একটা সুব্যবস্থা হবে। কিন্তু সেটি কখনো হয়নি। বরং ভোটে জিতে তাঁরা আর আমাদের খোঁজ নেন না। এটাই সত্য কথা।’ কথাগুলো বলেন মানিক ব্যাপারী (৩০)।

তিনি বাঁশের সাঁকোর উত্তর পাশের খোর্দ্দা নামাপাতা গ্রামের বাসিন্দা। খোর্দ্দা নামাপাতা উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। 

ভাঙা বাঁশের সাঁকো দেখিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা কল্পনা বেগম (৩৫) বলেন, খালি আইসে আর ছবি তুলি নিয়া যায়। মাস যায়, বছর যায় হামার সেতু হয় না। এমাকে বান্দি থোন। এখন থাকি যাই আইসবে তাকে বান্দি থোয়া নাইগবে। তা ছাড়া হামার সেতু হওয়ার নয়।’

কল্পনা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘এমন কোনো এমপি, ইউএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার নাই, যাই এটে আইসে নাই। খালি আইসে আর দেখি কয় খুব তাড়াতাড়ি এটা করি দেমো চিন্তা করেন না। এখন মনে হয় ওমরাগুলা হামার সঙ্গে তামাশা করেন। তোমরায় কনতো সাংবাদিক ভাই, এখন হামার ছাওয়াগুলা কেমন করি স্কুল যায়। কয়দিন থাকি তামার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়া আছে।’

জানা গেছে, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন এবং পাশের কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজড়া ও গুনাইগাছসহ তিন ইউনিয়নের সংযোগ সেতু এটি। তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা, চর খোর্দ্দা, লাঠশালা, বৈরাগী পাড়া, মণ্ডলপাড়া গ্রাম এবং বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের চরবিরহীম, সাধুয়া, দামারহাট, নাগড়াকুড়া, কালপানি, হুকাডাঙ্গা ও থেথরাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করেন।

এ ছাড়া দুই উপজেলার সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।

খোর্দ্দা নামাপাতা গ্রামের ওপর দিয়ে গেছে বুড়াইল নদী। নদীটি ছোট হওয়ায় বাঁশের সাঁকো আবার কখনো কাঠের সাঁকোয় যাতায়াত করে মানুষ। কিন্তু তিস্তা নদী ভেঙে যোগ হয় বুড়াইল নদীতে। সে কারণে তখন থেকে নদীর প্রস্থ আরও বেড়ে যায় এবং তিস্তার শাখা নদী নামে পরিচিতি পায়।

নদীতে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সে কারণে ২২ বছর ধরে প্রায় ৫০ হাজার লোক যাতায়াত করছে সেই সাঁকো দিয়ে।

প্রত্যেক বছরে একবার করে নির্মাণ করতে হয় সাঁকোটি। সংস্কার করতে হয় বছরে দুবার। মাস দুই আগে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। ঝুঁকি জেনেও যাতায়াত করতে গিয়ে গত ১৫ দিনে দুর্ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৫ বার।

ইদানীং নদীর স্রোতে কচুরিপানা ভেসে আসে এবং নড়বড়ে সাঁকোর খুঁটিতে চাপ পড়ে। সে কারণে সপ্তাহখানেক আগে সবার অজান্তে নড়বড়ে সাঁকোটি ভেঙে নদী পড়ে। সে কারণে চরম দুর্ভোগে আছে দুই পাড়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। 

তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি এ ধরনের সাঁকো রয়েছে। প্রতিবছর সেগুলো মেরামত করতে হয়; যা পরিষদের পক্ষে সম্ভব না। সে কারণে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় সেগুলো মেরামত করা হয়। তবে সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখেছি।’

উপজেলা প্রকৌশলী শামছুল আরেফীন জানান, যেখানে সাঁকো রয়েছে, সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলেই নির্মাণ করা হবে। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সেতু নির্মাণের তালিকা পাঠানো হয়েছে। করোনার কারণে দেরি হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে হয়ে যাবে। 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্রুত ওখানে বাঁশের সাঁকো করে দেব। সেতু না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত