Ajker Patrika

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও স্বদেশপ্রেম

রহমান মৃধা
Thumbnail image

বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোথায় স্কলারশিপে পড়ালেখা করা যায়, সেই সুযোগের ব্যবহার করে বিদেশে পড়াশোনা করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিজ অর্থে দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিদেশ যাচ্ছেন। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক এবং শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ বিদেশে পাঠান। প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী একজন ছাত্র ২০-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠান। পাঁচজন ছাত্রের টিউশন ফি পাঠানো হলে এর পরিমাণ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ব্যাংকের জন্য ১ লাখ ডলার অনেক মূল্যবান। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন, এতে করে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এর পরিমাণ কত? এদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় উভয়ই কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান দুই উৎসেরই পতন হয়েছে। এসব পূরণ করতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ যাতে নষ্ট না হয়, সেই চেষ্টা করে চলছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। অন্যদিকে সেটা কত দ্রুত শেষ করতে হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সরকার।

সবকিছু জানার পর মনে হচ্ছে প্রবাসী, পোশাকশ্রমিক, দিনমজুর, মেহনতি মানুষেরাই দেশটাকে টিকিয়ে রেখেছেন আর ধনীরা দেশের অর্থ, সম্পদ ধনীরামপুরে পাচার করে দিচ্ছেন!

রাজধানী ঢাকা সব সময় জনবহুল। মানুষের যত বেশি বসবাস কোনো নির্দিষ্ট স্থানে, সেখানে দূষণের পরিমাণ ততই বেশি। এরপর জড়িত হয় ময়লা-আবর্জনা, কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ইত্যাদি। পরিবেশ সুন্দর রাখতে সচেতন না হলে যা হয়। ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কারণে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে আমরা দ্বিতীয়বার ভাবি কি না, সন্দেহ।

ইদানীং বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতগুলো একটু বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করছেন বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতেরা বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোট গ্রহণ ও ভোট জালিয়াতি প্রসঙ্গে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কাজ করলে 
সে বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া দরকার, কিন্তু হচ্ছে কি সেটা?

পুরো লেখা পড়লে প্রশ্ন আসবে এতগুলো ঘটনা কেন জড়িত এখানে? একটির সঙ্গে আরেকটির কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, কারণ মানুষের মনুষ্যত্ব এবং বিবেকের অবনতির পেছনে একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। বায়ুদূষণে মনও দূষণ হয়, মনের কলুষতা, বিবেকের অবক্ষয়, শিক্ষার অধঃপতন, গণতন্ত্রের বিসর্জন—সবকিছু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

আমি শুধু একটি বিষয়ের ওপর রিফ্লেক্ট করব—সেটা হলো শিক্ষা। এত টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ে কি আমরা সঠিক শিক্ষা অর্জন করছি? নাকি আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, তাই যার যা খুশি তা-ই করছি? এর নাম তো স্বাধীনতা নয়? স্বাধীনতা মানে তো দায়িত্ব।
যা-ই হোক, আমার মতো অনেকেই বিদেশে পড়াশোনা করেছে। তবে দেশের বারোটা বাজিয়ে না। দেশ স্বাধীন হলে কিছু সুযোগ হলো বিদেশে লেখাপড়া করার, কিন্তু সেটা তো দেশের অর্থ ধ্বংস করে নয়; বরং বিদেশি বৃত্তির সদ্ব্যবহার করে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে এসব?
আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিবারের শত্রু। মা-বাবা, ভাইবোনের মধ্যে যখন বিশ্বাস, ভালোবাসা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও আস্থা হারাতে চলেছি, সেখানে কীভাবে সম্ভব একটি জাতির পরিবর্তন আনা? হবে কি পরিবর্তন যদি ঘরের শত্রু হয় বিভীষণ?

আমাদের নিজেদের পৃথকভাবে প্রশ্ন করে জানতে হবে এবং শিখতে হবে, আমাদের কর্মের ফলন সম্পর্কে, সঙ্গে মাথার চিন্তা আর মুখের বুলি—এ দুটিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতে হবে আমাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বকে।

আমাদের ধ্যান-জ্ঞান এবং হৃদয়ে নৈতিকতার প্রভাব বিস্তার করার মতো কাজ করতে হবে। অন্তর যদি সুন্দর না করতে পারি, হবে কি আমাদের সাধনা সফল? সুন্দর ও সুশিক্ষার মধ্যে এক বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্বাস ও মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব। পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও আচরণের প্রতিফলন সুন্দর হোক—এটাই প্রত্যাশা।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত