সাজিদ মোহন
গত বছরের ডিসেম্বরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খাইরুন নাহার (৪০) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন একই উপজেলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুনের (২২) সঙ্গে। শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ের ঘটনা অহরহ ঘটলেও শিক্ষিকা-ছাত্রের বিয়ের এই ঘটনা নিয়ে হইচই সৃষ্টি হয় মিডিয়ায়। দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম গুরুত্বসহকারে প্রচার করে খবরটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানালেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘৃণ্য আক্রমণের শিকার হন নবদম্পতি; বিশেষ করে শিক্ষিকা। কেমন
ছিল সেসব আক্রমণ। কয়েকটি মন্তব্যেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মন্তব্যকারীরা লিখেছেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম ছেলেটা মনে হয় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাই মা আনন্দে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে।’
‘সব সময় চাচারা জিতে না, এইবার চাচি জিতেছে।’-‘এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। এখন টাকা ছাড়া প্রাইভেট পড়তে পারবে।’ বিয়ের আট মাস পেরোতেই গত আগস্টে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। পেছনে অন্য অনেক কারণ থাকলেও নিহত শিক্ষিকার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, অসম বয়সের বিয়ে হওয়ায় খাইরুন নাহারের কলেজের কোনো সহকর্মী তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন না। আত্মীয়স্বজনও তাঁকে ত্যাগ করেছিল। বিয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কটূক্তি তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।
শিক্ষিকার মৃত্যুর পর সাফল্যের আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়েন কটূক্তিকারীরা। তাঁরা যেমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন তেমনটিই ঘটেছে। অনেকে আবার ভোল পাল্টে দায়ী করেন কটূক্তিকারীদের। শিক্ষিকার মৃত্যুর পেছনে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ট্রল, উপহাসকে দায়ী করেন নেটিজেনরা। তাঁরা লেখেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে মানসিকভাবে টিকে থাকা কঠিন। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এ রকম পরিস্থিতিতে একজন নারীর পক্ষে টিকে থাকা কতটা কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়। ভালো থাকা সম্ভব নয় তাঁর পুরুষ সঙ্গীরও।
যত বেশি লাইক, কমেন্ট, যত বেশি ভিউ, তত বেশি বিজ্ঞাপনে বিশ্বাসী আমাদের কতিপয় গণমাধ্যম এ মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। একটি মর্যাদাসম্পন্ন সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া পাঠক-দর্শকের মূল্যবোধ ও রুচির উন্নয়নের চেষ্টা করে। ইদানীং কতিপয় গণমাধ্যম সেটা না করে বরং নিজেদের নিচে নামিয়ে সমান্তরাল করে নিচ্ছে নিম্ন রুচি ও মূল্যবোধের সঙ্গে।
শিক্ষিকা-ছাত্রের বিয়ের ঘটনাটি অবশ্যই একটি খবর। কিন্তু ঘটনাটি নিছক খবর হিসেবে প্রচার করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। সংবাদটির সঙ্গে নারী ও প্রচলিত প্রথার ভাঙাগড়া জড়িত বিধায় সংবাদটি দিয়ে খুব সহজেই বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে। এ ধরনের হীন চিন্তার কারণে তাঁরা একবারও ভাবেননি সংবাদটি শিক্ষিকা-ছাত্রের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষিকার মৃত্যুর ঘটনার অনুরণন শেষ না হতেই কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম ভাইরাল হওয়ার আশায় আবারও উঠেপড়ে লেগেছে আরেকটি ঘটনা নিয়ে। ভালোবাসার টানে ইতালি থেকে এসে আলি সান্দ্রে নামে এক যুবক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রত্না নামের এক তরুণীকে। এই খবর প্রচারের পরপরই নেতিবাচক মন্তব্যে ভরে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বিয়ের কয়েক দিন পর কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে আরেকটি বিস্ফোরক খবর, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েকে বিয়ে করা সেই ইতালির নাগরিক পালিয়ে গেছে।’
এই খবর পেয়ে বিকৃত মস্তিষ্কের অসংখ্য লোক ঝাঁপিয়ে পড়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায়। সংবাদটিকে ভিত্তি করে অসংখ্য ফেসবুকার, ইউটিউবার, টিকটকার নেমে পড়েছেন সান্দ্রে-রত্না দম্পতি ও রত্নার পরিবারের চরিত্রহননে। রত্না ও তাঁর পরিবারকে লোভী ও সান্দ্রেকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে বিপর্যস্ত করে তুলছে রত্না ও তাঁর পরিবারের স্বাভাবিক জীবন।
অথচ রত্নার পরিবার বলছে, সান্দ্রে পালিয়ে যাননি। তাদের সঙ্গে সান্দ্রের যোগাযোগ রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সান্দ্রে ফিরে আসবেন। সান্দ্রে যদি ফিরে না-ও আসেন, এটা সম্পূর্ণ রত্না ও তাঁর পরিবারের বিষয়। কারও ব্যক্তিগত জীবনকে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেনে এনে হেয়প্রতিপন্ন করার পরিণাম আমরা মাত্র কয়েক দিন আগেই দেখেছি শিক্ষিকার আত্মহত্যার ঘটনায়। এরপরও কি আমাদের বিবেকবোধ, মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না?
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
গত বছরের ডিসেম্বরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খাইরুন নাহার (৪০) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন একই উপজেলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুনের (২২) সঙ্গে। শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ের ঘটনা অহরহ ঘটলেও শিক্ষিকা-ছাত্রের বিয়ের এই ঘটনা নিয়ে হইচই সৃষ্টি হয় মিডিয়ায়। দেশের প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যম গুরুত্বসহকারে প্রচার করে খবরটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানালেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘৃণ্য আক্রমণের শিকার হন নবদম্পতি; বিশেষ করে শিক্ষিকা। কেমন
ছিল সেসব আক্রমণ। কয়েকটি মন্তব্যেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মন্তব্যকারীরা লিখেছেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম ছেলেটা মনে হয় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাই মা আনন্দে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে।’
‘সব সময় চাচারা জিতে না, এইবার চাচি জিতেছে।’-‘এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। এখন টাকা ছাড়া প্রাইভেট পড়তে পারবে।’ বিয়ের আট মাস পেরোতেই গত আগস্টে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। পেছনে অন্য অনেক কারণ থাকলেও নিহত শিক্ষিকার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, অসম বয়সের বিয়ে হওয়ায় খাইরুন নাহারের কলেজের কোনো সহকর্মী তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন না। আত্মীয়স্বজনও তাঁকে ত্যাগ করেছিল। বিয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কটূক্তি তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।
শিক্ষিকার মৃত্যুর পর সাফল্যের আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়েন কটূক্তিকারীরা। তাঁরা যেমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন তেমনটিই ঘটেছে। অনেকে আবার ভোল পাল্টে দায়ী করেন কটূক্তিকারীদের। শিক্ষিকার মৃত্যুর পেছনে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ট্রল, উপহাসকে দায়ী করেন নেটিজেনরা। তাঁরা লেখেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে মানসিকভাবে টিকে থাকা কঠিন। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এ রকম পরিস্থিতিতে একজন নারীর পক্ষে টিকে থাকা কতটা কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়। ভালো থাকা সম্ভব নয় তাঁর পুরুষ সঙ্গীরও।
যত বেশি লাইক, কমেন্ট, যত বেশি ভিউ, তত বেশি বিজ্ঞাপনে বিশ্বাসী আমাদের কতিপয় গণমাধ্যম এ মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। একটি মর্যাদাসম্পন্ন সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া পাঠক-দর্শকের মূল্যবোধ ও রুচির উন্নয়নের চেষ্টা করে। ইদানীং কতিপয় গণমাধ্যম সেটা না করে বরং নিজেদের নিচে নামিয়ে সমান্তরাল করে নিচ্ছে নিম্ন রুচি ও মূল্যবোধের সঙ্গে।
শিক্ষিকা-ছাত্রের বিয়ের ঘটনাটি অবশ্যই একটি খবর। কিন্তু ঘটনাটি নিছক খবর হিসেবে প্রচার করাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। সংবাদটির সঙ্গে নারী ও প্রচলিত প্রথার ভাঙাগড়া জড়িত বিধায় সংবাদটি দিয়ে খুব সহজেই বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে। এ ধরনের হীন চিন্তার কারণে তাঁরা একবারও ভাবেননি সংবাদটি শিক্ষিকা-ছাত্রের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষিকার মৃত্যুর ঘটনার অনুরণন শেষ না হতেই কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম ভাইরাল হওয়ার আশায় আবারও উঠেপড়ে লেগেছে আরেকটি ঘটনা নিয়ে। ভালোবাসার টানে ইতালি থেকে এসে আলি সান্দ্রে নামে এক যুবক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রত্না নামের এক তরুণীকে। এই খবর প্রচারের পরপরই নেতিবাচক মন্তব্যে ভরে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বিয়ের কয়েক দিন পর কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে আরেকটি বিস্ফোরক খবর, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েকে বিয়ে করা সেই ইতালির নাগরিক পালিয়ে গেছে।’
এই খবর পেয়ে বিকৃত মস্তিষ্কের অসংখ্য লোক ঝাঁপিয়ে পড়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায়। সংবাদটিকে ভিত্তি করে অসংখ্য ফেসবুকার, ইউটিউবার, টিকটকার নেমে পড়েছেন সান্দ্রে-রত্না দম্পতি ও রত্নার পরিবারের চরিত্রহননে। রত্না ও তাঁর পরিবারকে লোভী ও সান্দ্রেকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে বিপর্যস্ত করে তুলছে রত্না ও তাঁর পরিবারের স্বাভাবিক জীবন।
অথচ রত্নার পরিবার বলছে, সান্দ্রে পালিয়ে যাননি। তাদের সঙ্গে সান্দ্রের যোগাযোগ রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সান্দ্রে ফিরে আসবেন। সান্দ্রে যদি ফিরে না-ও আসেন, এটা সম্পূর্ণ রত্না ও তাঁর পরিবারের বিষয়। কারও ব্যক্তিগত জীবনকে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেনে এনে হেয়প্রতিপন্ন করার পরিণাম আমরা মাত্র কয়েক দিন আগেই দেখেছি শিক্ষিকার আত্মহত্যার ঘটনায়। এরপরও কি আমাদের বিবেকবোধ, মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না?
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৮ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৮ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৮ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫