Ajker Patrika

স্বস্তি-অস্বস্তির ঈদ

সম্পাদকীয়
স্বস্তি-অস্বস্তির ঈদ

ঈদুল আজহা কেমন কাটল—এ প্রশ্ন করা হলে একবাক্যে সবাই নিশ্চয়ই বলবেন না যে ঈদটা দারুণ কেটেছে, ভালো কেটেছে। তবে এবার কোরবানির ঈদ নানা কারণেই অনেকটা স্বস্তিকর হয়েছে বলে মনে হয়। প্রথমত, কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশুর সরবরাহ ছিল। তবে শুরুর দিকে দাম বেশি হওয়ার অভিযোগ ছিল।

খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার জন্য পশুর দামও ছিল বাড়তি। আবার শেষ মুহূর্তে দাম কমেছিল বলেও খবর পাওয়া গেছে। ফলে যাঁরা রয়েসয়ে পছন্দের পশু কিনেছেন, তাঁরা লাভবান হয়েছেন। কোরবানি যাঁরা দেন, তাঁরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেন, বাজেটও আগেভাগেই ঠিক করে রাখেন। কোরবানি দিতে চেয়ে পারেননি, এমন অভিযোগ তেমন শোনা যায়নি।

এবার যাঁরা ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য ঢাকা ছেড়েছিলেন, তাঁদের পথের বিড়ম্বনাও কম পোহাতে হয়েছে। রাস্তাঘাটে যানজটে প্রচুর সময় নষ্ট হওয়ার অভিযোগও তেমন শোনা যায়নি। সরকারি ছুটি পাঁচ দিন হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কম হয়েছে বলে মনে হয়। তবে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের জন্য একেবারে নিষ্কণ্টক ব্যবস্থা করা সহজ নয়।

প্রচণ্ড গরমে এবার ঈদ আনন্দ মাটি হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, বাস্তবে তা হয়নি। ঈদের আগে-পরে প্রায় সারা দেশেই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে; বরং কোথাও কোথাও ঈদের নামাজ খোলা মাঠে করা যায়নি। সে জন্য অবশ্য ঈদ আনন্দে বড় ধরনের বিঘ্ন হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বৃষ্টির জন্য বরং বর্জ্য অপসারণের সুবিধা হয়েছে।

এবার ঈদের আগে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর। কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০-৬০০ টাকা হওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। বলা হচ্ছে বৃষ্টির কারণে জোগান কম হওয়ায় এই মূল্যবৃদ্ধি। কোনো না কোনো অজুহাতে এভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। চিনির দামও অকারণেই অসম্ভব বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্যই ব্যবসা করেন। কিন্তু এই মুনাফার প্রবণতা যদি হয় লাগামছাড়া, তাহলে সেখানে লাগাম টানার প্রশ্ন আসে।

আমাদের বাজারব্যবস্থা কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা খেয়ালখুশিমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়ান এবং এ ক্ষেত্রে তাঁদের অজুহাতের অন্ত থাকে না।

বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার নিশ্চয়ই ব্যবসায়ী নয়। তবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখভাল করা অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব। কোনো পণ্যের উৎপাদন কম হলে, কোনো কারণে ঘাটতির আশঙ্কা থাকলে বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ সরকার নিতে পারে।  আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে কাঁচা মরিচ ও চিনির দাম আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম। তাহলে এই দুটি পণ্য যথাসময়ে আমদানি করার উদ্যোগ নিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কেন করা হলো না? ঈদের পর রাজনীতির মাঠ গরম করে তোলার যে কথা শোনা যাচ্ছে, এর সঙ্গে কাঁচা মরিচের দামের গরমের কোনো সম্পর্ক নেই তো?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত