Ajker Patrika

মান্দায় দাম বাড়লেও কমেছে খাবারের মান

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১৫: ১১
Thumbnail image

নির্মাণশ্রমিক হজরত আলী সকালের খাবার খেয়ে কাজে বের হন, ফেরেন সন্ধ্যার পর। চুক্তিবদ্ধ কাজের কারণে দুপুরে বাড়ি ফেরা হয় না। প্রতিদিন কোনো না কোনো খাবারের দোকানে সারতে হয় দুপুরের খাবার। পকেটের দিকে খেয়াল রেখে প্রতিদিন দুপুরের খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হয়। রুটি, ডিম-ভাত, সবজি-ভাত দিয়ে সেরে নেন দুপুরের আহার। কয়েক মাস আগেও সাধ্যের মধ্যে পছন্দমতো খাবার খাওয়া যেত। এখন হোটেলে গিয়ে দরদাম জেনে তারপর খেতে হয়।

ভোক্তাদের অভিযোগ, এ সপ্তাহে আবারও বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে বেশি দাম নিচ্ছেন মালিকেরা। কোনো কোনো দোকানে দাম বাড়লেও কমে গেছে খাবারের মান। হোটেলগুলোতে ভাতের প্লেটের আকার ছোট হয়েছে। মাছ ও মাংসের টুকরা আগের তুলনায় ছোট করা হয়েছে। শুধু ডিম একই দামে বিক্রি হচ্ছে। হোটেলের দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

হোটেলমালিকদের দাবি, বাজারে নির্ধারিত দামে কোনো জিনিস বিক্রি হচ্ছে না। রাতারাতি ওঠানামা করছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এতে তাঁদেরও আয় কমে গেছে। তাই খাবার বিক্রিতে এসব পরিবর্তন আনতে হয়েছে তাঁদের।

আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ভোক্তা বলেন, কয়েক মাস আগে ডিম-ভাত খেয়ে বিল দিতে হয়েছে ২৫ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৪০ টাকা। একইভাবে ২৫০ গ্রাম রুটিতে বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা, মাছ-ভাতে বেড়েছে ২০ টাকা, সবজি-ভাতে ১০ টাকা এবং গরুর মাংস-ভাতে আগের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা করে।

রেজাউন নবী নামের আরেক ভোক্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, হোটেলগুলোতে খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে দেড় প্লেট ভাতের পরিবর্তে এখন খেতে হয় দুই প্লেট। মাছ ও মাংসের টুকরা আগের তুলনায় ছোট করা হয়েছে। শুধু ডিম দুই ভাগ করে বিক্রি করতে না পারায় এর আকার ঠিক আছে। এ অবস্থায় সংসারে ব্যয়ের দিক খেয়াল রেখে দুপুরের খাবার সারতে হচ্ছে তাঁকে।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের হোটেল, রেস্তোরাঁ, চায়ের স্টলসহ অন্য দোকানগুলোতে গিয়ে সব ধরনের খাদ্যসামগ্রী চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৫ টাকার শিঙাড়া বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা, ৩ টাকার পেঁয়াজি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। অনেক দোকানে আগের দাম ঠিক থাকলেও আকারে অনেক ছোট করা হয়েছে। একই সঙ্গে রসুনের চপ, ডিমের চপের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন দোকানিরা।

এদিকে গত দুই দিনে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ১৬০ টাকা কেজিতে বয়লার মুরগি, প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৭০, খাসির মাংস ৭৫০, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২২০ ও প্রতি কেজি সরিষার তেল ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করেই প্রতি কেজি আলুতে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। একই সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁতেও। এ বিষয়ে চা বিক্রেতা মানিক দাস বলেন, ‘প্রতিদিন আমার দোকানে ১০০টির বেশি শিঙাড়া বিক্রি হয়। আগে দাম ছিল ৫ টাকা, কিন্তু বর্তমান বাজারে তেল, ময়দাসহ মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের দামে আর বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২ টাকা বাড়িয়ে প্রতিটি শিঙাড়া ৭ টাকায় বিক্রি করছি।’

হোটেল ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গরু ও খাসির মাংস প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। নদীর ছোট মাছ পাওয়া গেলেও দাম আকাশছোঁয়া। বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত