রহমান মৃধা
ইনস্ট্রাকশন, রেসিপি, গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা যা-ই বলি না কেন, এগুলো মূলত আমরা ব্যবহার করি জানা, শেখা, অনুকরণ বা অনুসরণ করার জন্য। যেমন—একটি কম্পিউটার কেনা হলো। এখন সেটাকে কীভাবে সেট করতে হবে, তার জন্য রয়েছে ইনস্ট্রাকশন। একটি চমৎকার ইতালিয়ান খাবার রান্না করতে হবে, তার জন্য আমরা প্রথমে সেই রেসিপির নিয়ম অনুযায়ী রান্না করি। গাইডলাইন লেখাপড়া বা শিক্ষণীয় বিষয়ে ব্যবহৃত হয় এবং নিকনির্দেশনা মূলত ধর্মীয় বিষয়ের ওপর হয়ে থাকে, যা আমরা জানা, শোনা বা পড়ার মধ্য দিয়ে শিখে থাকি। এখন যদি ইনস্ট্রাকশন, রেসিপি, গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনাগুলো শুধু মুখস্থ করি বা প্রতিদিন পড়ি এবং সব নিয়মকানুন জানা সত্ত্বেও তার কোনো চর্চা না করি, তাহলে জেনে কী হবে?
আমরা যা জানি, তার যদি সঠিক ব্যবহার না করি, তবে তা জানার কী মূল্য থাকতে পারে! আমরা প্রতিদিন খাবারের রেসিপি পড়ি, অথচ কখনো সেই রেসিপি অনুযায়ী রান্না করি না। কী হবে সেই রেসিপি দিয়ে বা সেই রেসিপি পড়ে? আমরা মূলত এ ধরনের কাজ প্রতিদিনই করে চলেছি, যা ‘ক্রিয়েট নো ভ্যালু ফর নো ওয়ান’।
এখন একটি মর্মান্তিক ও হৃদয়ছোঁয়া ঘটনার ওপর আলোকপাত করি। পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতাটি ১৯৪৯ সালে তাঁর ‘এক পয়সার বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়। পরে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্কুলের পাঠ্যবইয়ে। শুনেছি, ১৯৪৬ সালে আসমানীর গ্রাম রসুলপুরে বসে আসমানীর বাড়ির অবস্থা দেখেই জসীমউদ্দীন লিখেছিলেন—‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও/ বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’। কবিতাটি পড়েনি এমন মানুষ বাংলাদেশে হয়তো নেই বললেই চলে। যাই হোক, কবিতার একটি চরিত্র থেকেই ফরিদপুরের রসুলপুর গ্রামের অতি সাধারণ এই আসমানী বেগম সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন অতি পরিচিত একটি নাম। সম্ভবত ১৯১৩ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে আসমানীর জন্ম। আরমান মল্লিকের মেয়ে আসমানীর আনুমানিক মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় পাশের রসুলপুর গ্রামের হাসাম মন্ডলের (রহিমুদ্দির) সঙ্গে। তিনি দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী ছিলেন। আনুমানিক ৯৯ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে তিনি মারা যান। এ সময় তিনি দুই ছেলেসহ চার মেয়ে রেখে যান। গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, একটি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম কবি জসীমউদ্দীনের কবিতার সেই আসমানীর ছেলে ভিক্ষা করছেন!
বিষয়টি আমাকে, আমার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। হয়তো আপনাকেও দিচ্ছে। কবি জসীমউদ্দীন না হয় ব্রিটিশ সরকারের সময় আসমানীর দারিদ্র্যকে জনসমুদ্রে তুলে ধরেছিলেন শুধু জানিয়ে দিতে যে কী পরিমাণ নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তৎকালীন মেহনতি মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়েছে। তারপর কত বছর পার হয়েছে। ব্রিটিশ তাড়িয়েই আমরা ক্ষান্ত হইনি, তাড়িয়েছি পাকিস্তানিদেরও। তারপর বিদেশিদের ছোবল থেকে মুক্ত হয়েছি সেই বায়ান্ন বছর আগে। তা সত্ত্বেও আসমানীর পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারিনি, পারিনি মাতৃভূমির কোটি কোটি মানুষকে। এটাই আমাকে তাড়া করেছে! এখন তো আর সেই ব্রিটিশ নেই, নেই পাকিস্তান। তাহলে এখনো কেন সেই আসমানীর ছেলে ভিক্ষা করছেন? আমরা পাথরের মতো শক্ত হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পৃথিবীতে আসিনি। আমাদের শিক্ষা, রেসিপি, ইনস্ট্রাকশন বা গাইডলাইন কাজে লাগাতে শিখিনি আজও। প্রশ্ন—আমরা আসলে কাজে লাগাতে চাই, নাকি শুধু মুখস্থ করে রাখতে চাই?
আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, পূজা করি, কিন্তু সেই অনুপাতে গাইডলাইন কাজে লাগাই না। যার ফলে যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি আসমানী আজও পরিবার, মহল্লাসহ পুরো দেশ ভরা। আমি সত্যিকারার্থে তাদের জন্য কিছু করতে চাই এবং সেই সঙ্গে সু এবং সঠিক শিক্ষারও সেরা চর্চা করতে চাই। আছেন কি কেউ যে আমার সঙ্গে থাকবেন? নইলে এতটুকু বলব—‘দরগায় মন দিলে কী হবে, মিথ্যা ফকির সেজে কী হবে? অন্তর যদি না হয় সুন্দর, বিফল হবে সাধনা।’
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
ইনস্ট্রাকশন, রেসিপি, গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা যা-ই বলি না কেন, এগুলো মূলত আমরা ব্যবহার করি জানা, শেখা, অনুকরণ বা অনুসরণ করার জন্য। যেমন—একটি কম্পিউটার কেনা হলো। এখন সেটাকে কীভাবে সেট করতে হবে, তার জন্য রয়েছে ইনস্ট্রাকশন। একটি চমৎকার ইতালিয়ান খাবার রান্না করতে হবে, তার জন্য আমরা প্রথমে সেই রেসিপির নিয়ম অনুযায়ী রান্না করি। গাইডলাইন লেখাপড়া বা শিক্ষণীয় বিষয়ে ব্যবহৃত হয় এবং নিকনির্দেশনা মূলত ধর্মীয় বিষয়ের ওপর হয়ে থাকে, যা আমরা জানা, শোনা বা পড়ার মধ্য দিয়ে শিখে থাকি। এখন যদি ইনস্ট্রাকশন, রেসিপি, গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনাগুলো শুধু মুখস্থ করি বা প্রতিদিন পড়ি এবং সব নিয়মকানুন জানা সত্ত্বেও তার কোনো চর্চা না করি, তাহলে জেনে কী হবে?
আমরা যা জানি, তার যদি সঠিক ব্যবহার না করি, তবে তা জানার কী মূল্য থাকতে পারে! আমরা প্রতিদিন খাবারের রেসিপি পড়ি, অথচ কখনো সেই রেসিপি অনুযায়ী রান্না করি না। কী হবে সেই রেসিপি দিয়ে বা সেই রেসিপি পড়ে? আমরা মূলত এ ধরনের কাজ প্রতিদিনই করে চলেছি, যা ‘ক্রিয়েট নো ভ্যালু ফর নো ওয়ান’।
এখন একটি মর্মান্তিক ও হৃদয়ছোঁয়া ঘটনার ওপর আলোকপাত করি। পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতাটি ১৯৪৯ সালে তাঁর ‘এক পয়সার বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়। পরে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্কুলের পাঠ্যবইয়ে। শুনেছি, ১৯৪৬ সালে আসমানীর গ্রাম রসুলপুরে বসে আসমানীর বাড়ির অবস্থা দেখেই জসীমউদ্দীন লিখেছিলেন—‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও/ বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’। কবিতাটি পড়েনি এমন মানুষ বাংলাদেশে হয়তো নেই বললেই চলে। যাই হোক, কবিতার একটি চরিত্র থেকেই ফরিদপুরের রসুলপুর গ্রামের অতি সাধারণ এই আসমানী বেগম সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন অতি পরিচিত একটি নাম। সম্ভবত ১৯১৩ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে আসমানীর জন্ম। আরমান মল্লিকের মেয়ে আসমানীর আনুমানিক মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় পাশের রসুলপুর গ্রামের হাসাম মন্ডলের (রহিমুদ্দির) সঙ্গে। তিনি দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী ছিলেন। আনুমানিক ৯৯ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে তিনি মারা যান। এ সময় তিনি দুই ছেলেসহ চার মেয়ে রেখে যান। গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, একটি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম কবি জসীমউদ্দীনের কবিতার সেই আসমানীর ছেলে ভিক্ষা করছেন!
বিষয়টি আমাকে, আমার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। হয়তো আপনাকেও দিচ্ছে। কবি জসীমউদ্দীন না হয় ব্রিটিশ সরকারের সময় আসমানীর দারিদ্র্যকে জনসমুদ্রে তুলে ধরেছিলেন শুধু জানিয়ে দিতে যে কী পরিমাণ নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তৎকালীন মেহনতি মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়েছে। তারপর কত বছর পার হয়েছে। ব্রিটিশ তাড়িয়েই আমরা ক্ষান্ত হইনি, তাড়িয়েছি পাকিস্তানিদেরও। তারপর বিদেশিদের ছোবল থেকে মুক্ত হয়েছি সেই বায়ান্ন বছর আগে। তা সত্ত্বেও আসমানীর পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারিনি, পারিনি মাতৃভূমির কোটি কোটি মানুষকে। এটাই আমাকে তাড়া করেছে! এখন তো আর সেই ব্রিটিশ নেই, নেই পাকিস্তান। তাহলে এখনো কেন সেই আসমানীর ছেলে ভিক্ষা করছেন? আমরা পাথরের মতো শক্ত হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পৃথিবীতে আসিনি। আমাদের শিক্ষা, রেসিপি, ইনস্ট্রাকশন বা গাইডলাইন কাজে লাগাতে শিখিনি আজও। প্রশ্ন—আমরা আসলে কাজে লাগাতে চাই, নাকি শুধু মুখস্থ করে রাখতে চাই?
আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, পূজা করি, কিন্তু সেই অনুপাতে গাইডলাইন কাজে লাগাই না। যার ফলে যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি আসমানী আজও পরিবার, মহল্লাসহ পুরো দেশ ভরা। আমি সত্যিকারার্থে তাদের জন্য কিছু করতে চাই এবং সেই সঙ্গে সু এবং সঠিক শিক্ষারও সেরা চর্চা করতে চাই। আছেন কি কেউ যে আমার সঙ্গে থাকবেন? নইলে এতটুকু বলব—‘দরগায় মন দিলে কী হবে, মিথ্যা ফকির সেজে কী হবে? অন্তর যদি না হয় সুন্দর, বিফল হবে সাধনা।’
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪