Ajker Patrika

রাবার ড্যামে চাষে স্বস্তি

শামীম রেজা, বাগমারা
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৬
Thumbnail image

বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই পায়ে হেঁটে পার হওয়া যেত ফকিরানী নদী। নদীটির দুপাশে বিস্তীর্ণ উর্বর জমি থাকলেও শুধু পানির অভাবে সেগুলো অনাবাদি পড়ে থাকত। বোরো মৌসুম না আসা পর্যন্ত কৃষকদের একরকম হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হতো। অনেক জেলে জীবন ধারণে অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন ফসল ফলাতে ব্যস্ত নদী কূলের কৃষকেরা। আর বর্ষার অপেক্ষায় থাকতে হয় না জেলেদের। বর্ষা চলে গেলেও নদীতে মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তাঁরা। এই দৃশ্য এখন রাজশাহীর বাগমারার বিশাল এলাকাজুড়ে।

বাগমারা উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ফকিরানী নদী। এটি নওগাঁর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর একটি শাখা নদী। নওগাঁর প্রসাদপুর-জোতবাজার হয়ে এটি ফকিরানী নদী নাম ধারণ করে বাগমারায় প্রবাহিত হয়ে বারনই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, যা নলডাঙ্গা নাটোর হয়ে যমুনায় মিশেছে।

নদীর অপর অংশ বাগমারা থানার পাশ দিয়ে মোহনগঞ্জ ও নওহাটা হয়ে মিলিত হয়েছে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে। ফকিরানী-বারনই মিলে বাগমারায় এই নদী প্রবাহিত হয়েছে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।

উপজেলা বিএমডিএর উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, পানি শুকিয়ে গেলে নদী সংলগ্ন বিশাল এলাকার হাজার হাজার কৃষককে বর্ষার পানির অপেক্ষায় থাকতে হতো। সে সময় তাঁদের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। নদীতে পানির অভাবে চাষাবাদের কোনো কাজ করতে পারতেন না। প্রায় ৭ বছর আগে নাটোরের নলডাঙ্গা এলাকায় বিএমডিএর উদ্যোগে রাবারড্যাম নির্মাণ করার ফলে নলডাঙ্গা, বাগমারা ও মান্দা এলাকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য খুলে গেছে। এখন তাঁরা নদীর চর এলাকায় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ প্রকার রবিশস্য উৎপাদন করতে পারছেন। তিন উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার ড্যামের পানি দিয়ে ফসল চাষ হচ্ছে। এখন সারা বছর নদীতে মাছ শিকার করে সহজেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন জেলেরা।

কাচারী কোয়ালীপাড়ার কৃষক আমিনুল হক জানান, আগে বর্ষা চলে গেলে নদী পুরোটাই শুকিয়ে যেত। এখন রাবার ড্যামের ফলে নদীতে পানি থাকায় এই পানি দিয়ে নদী পাড়ের কৃষকেরা খুব সহজেই বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে পারছেন।

একই এলাকার মৎস্যজীবী রমজান আলী জানান, এবার বর্ষা বেশি হওয়ায় অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ফলে অনেক জেলে মাছ ধরে লাভবান হয়েছেন। রাবার ড্যামের কারণে নদীতে ভরা পানি থাকায় জেলেরা এখনো খেয়া জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারছেন। জেলেদের মতে, রাবার ড্যাম এখন তাঁদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাগমারা বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী এ এস এম দেলোয়ার হোসেন জানান, ড্যাম প্রকল্প চালু হওয়ায় কৃষক, মৎস্যজীবীসহ নিম্ন-আয়ের লোকজন সহজেই লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, রাবার ড্যাম প্রকল্প সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই প্রকল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে আরও সম্প্রসারণ করা হলে শুষ্ক মৌসুমে আরও অনেক অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত