Ajker Patrika

পাহাড় কেটে রাস্তায় মাটি

শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা (বান্দরবান)
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১১: ১২
Thumbnail image

বান্দরবানের রুমায় রাস্তার নির্মাণকাজে বালু হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। এ জন্য কোনো প্রকার ঝুঁকি নিরূপণ ছাড়াই উপজেলায় ছোট-বড় তিনটি পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের (পাচউবো) বাস্তবায়নাধীন রাস্তার কাজে বালুসাদৃশ্য এই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সাঙ্গুর বালু তোলার অনুমতি না পাওয়ায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, উপজেলার রুমা-রোয়াংছড়ি সড়ক থেকে পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় (পাইন্দুপাড়া) পর্যন্ত রাস্তার কার্পেটিং করছে এলজিইডি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ লাখ টাকা। এ কাজে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার হচ্ছে। এ জন্য কেটে ফেলা হয়েছে ছোট-বড় তিনটি পাহাড়। এর মধ্যে পাইন্দু হেডম্যানপাড়ায় যাওয়ার রাস্তায় দুটি পাহাড় কাটা হয়ে গেছে। অন্যটি রুমা-রোয়াংছড়ি সড়কের চান্দাপাড়ার নামন্তি টার্নিং পয়েন্টে। ঠিকাদারের লোকজন এসব পাহাড় কেটে মাটি নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

গত শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, রুমা-রোয়াংছড়ি সড়কে চান্দাপাড়ায় নামন্তি রাস্তার টার্নিং পয়েন্টে একটি এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা চলছে। রাস্তার দুই পাশ থেকেই পাহাড় কাটা হয়েছে। মাটি খুঁড়ে নেওয়ায় একটি পাহাড়ের পাশেই বড় আকারে গর্ত সৃষ্ট হয়েছে। আগামী বর্ষায় ওই জায়গা ধসে যান চলাচল বন্ধ হওয়াসহ বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

চান্দাপাড়া থেকে দিনে দুটি ট্রাকে মাটি নিয়ে পাইন্দু রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হচ্ছে। পাহাড় কাটায় নিয়োজিত এক্সকাভেটরের চালক আরমান বলেন, বান্দরবানের ঠিকাদার আনোয়ারের অধীনে ছয় দিন ধরে রাস্তার পাশের পাহাড়ের মাটি কাটছেন।

পাহাড়ের মাটি বহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাকচালক জিসান বলেন, মাটিভর্তি ট্রাক প্রতিদিন ১৫ বার বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। তবে পাহাড় কাটার কাজে তাঁর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। রাস্তাটি সোজা করতে টার্নিং পয়েন্টে পাহাড়টি হালকা কাটতে হয়েছে বলেও দাবি করছেন তিনি।

ঠিকাদারের হয়ে কাজ দেখভালের দায়িত্ব আছেন শহিদুল ইসলাম সাগর। তবে নিজেকে ‘সাইট ম্যানেজার’ পরিচয় দিয়ে বলেন, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর ঠিকাদার কথা বলে ওই পাহাড় থেকে বালু কেনা হয়েছে। তাই পাহাড় থেকে মাটি কেটে রাস্তার কাজে ব্যবহার করছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, পাহাড় থেকে বালু বিক্রির কথা সত্য নয়। এ ব্যাপারে পরে কথা হবে বলে তিনি এর বেশি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ঠিকাদার আনোয়ার বলেন, রুমায় সাঙ্গু নদী থেকে বালু নিতে দিচ্ছে না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাই এলজিইডির সঙ্গে বোঝাপড়া করে পাহাড়ের বালু সংগ্রহ করে রাস্তার কাজে ব্যবহার করতে হয়েছে।

রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা রুমার এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘সবখানে এভাবে চলছে। সেটা সবার অজানার বিষয় নয়। তারপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে কাজটি বন্ধ রাখতে হবে।’ তবে তা করা হবে কি না সে বিষয়ে পরামর্শ চান তিনি।

রাস্তার নির্মাণকাজে বালুর পরিবর্তে মাটি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী ও রুমা উপজেলা প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ জামান বলেন, প্রকল্পটি কোথায় হচ্ছে তাঁর ঠিক ধারণা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

রুমা ইউএনও মোহাম্মদ মামুন শিবলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফখরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত