Ajker Patrika

লাখো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ 
লাখো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার খিরতলা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন। ওয়ারিশ সূত্রে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার জমির মালিক হন তাঁদের পরিবারের ৬ জন। সেই জমি বণ্টনের জন্য যান রায়গঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। সেখানে জাকিরের সঙ্গে পরিচয় হয় কার্যালয়ের পিয়ন শাহাদত হোসেন ও দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদের সঙ্গে। এই জমি বণ্টন ও দরপত্রের জন্য উৎসে কর বাবদ ৩ লাখ টাকা জমা দিতে হবে বলেন রিজওয়ান। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ওই টাকা পে-অর্ডার করেন জাকির। পরে তিনি জানতে পারেন, আদতে জমির উৎসে কর বলে কিছু নেই। 

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জাকিরের এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সামনে আসে। এরপরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে গত ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নামে এমন ভুয়া পে-অর্ডার ক্যাশ হয়েছে ১৬টি। এতে আদায় হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। সূত্র বলছে, এভাবে একটি চক্র প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 
সূত্র বলছে, চক্রটি বেশ বড়। এর সঙ্গে রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন জড়িত রয়েছেন।

একই সঙ্গে ব্যাংকের কর্মীও জড়িত। তবে জাকির হোসেনের অভিযোগ সামনে আসার পর কেউ এই দায় নিচ্ছে না। পিয়ন শাহাদত দায় চাপিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রারের ওপর। রায়গঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার সাগর দাস বলছেন, তিনি কিছুই জানেন না। আর রায়গঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলছেন, টাকা নগদায়ন করার বিধান কোনো কাগজে নাই, তবে সাবরেজিস্ট্রারের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে এগুলো করা হয়।

এদিকে জাকির হোসেন জানালেন, পিয়ন শাহাদত ও দলিল লেখক রিজওয়ান তাঁকে ওই টাকা পে-অর্ডার করতে বলেছিলেন মান্নান নামের একজনের মাধ্যমে। আসলে ওই মান্নান রিজওয়ানের সহযোগী। মান্নানের দাবি, পিয়ন শাহাদত আর দলিল লেখক রিজওয়ানের কথায় তিনি কাজ করেন। 

এদিকে মান্নানের ভাষ্য, ‘আমি পে-অর্ডার তৈরি করলেও টাকা নগদায়ন করিনি। টাকা তুলে শাহাদতের কাছে দেওয়া হয়েছে।’ 
তবে দলিল লেখক রিজওয়ান রশিদ বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রারের নির্দেশেই আমি উৎসে করের পে-অর্ডার করতে দলিল গ্রহীতাদের বলেছি। দলিল শেষে পে-অর্ডার নগদায়ন করে সাবরেজিস্ট্রারকে দেওয়া হয়েছে। এই অফিসে উৎসে কর ছাড়া কোনো দলিল হয় না।’ 
শাহাদত বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না। আমাকে স্যার (সাবরেজিস্ট্রার) যেভাবে বলেন, সেভাবেই কাজ করি। এখানে অনেক কিছুই হয়, সবকিছু আপনাদের বলতে পারব না।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন রায়গঞ্জের সাবরেজিস্ট্রার সাগর দাস। তিনি বলেন, ‘ওয়ারিশান বণ্টন এবং দানপত্র দলিলের জন্য কখনই আমি উৎসে কর নিতে বলিনি। কারণ, এই কর নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কীভাবে পে-অর্ডার নগদায়ন করা হয়, তা আমার জানা নেই। আমি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত না।’ 

রায়গঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রি অফিসের হাতে গোনা কয়েকজন এই পে-অর্ডারগুলো করেন। কখনো পে-অর্ডার নগদায়নের প্রয়োজন হলে তাঁরাই আবেদন করে নগদায়ন করেন। যদিও এই টাকা নগদায়ন করার বিধান কোনো কাগজে নাই, তবে সাবরেজিস্ট্রারের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে এগুলো করা হয়।’ 

এদিকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জাকিরের অভিযোগের প্রতিলিপি ইতিমধ্যে পেয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। কোনোভাবেই উৎসে কর নেওয়ার বিধান নেই। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই এমন ঘটনা প্রচুর ঘটছে। যেমন আরেক ভুক্তভোগী মতিউর রহমানের কথা বলা যেতে পারে। জমি বণ্টন করতে গিয়ে ভুয়া উৎসে কর তিনিও দিয়েছেন। বললেন, ‘আমার পরিবারের ভাই-বোনদের সঙ্গে জমিজমা বণ্টনেও উৎসে কর নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জানতে পারলাম, এই দলিলে কোনো উৎসে কর নেই। আমি আমার পে-অর্ডারের টাকা ফেরত চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত