সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমে অর্ধেক

যশোরে অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমের আওতায় ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচিতে এবার সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

যশোর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলার ৯৩ ইউনিয়নে ও আট পৌরসভায় এবার ভিজিএফের সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬ জন। গত ঈদেও জেলায় উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮ ছিল, কিন্তু চলতি বছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জনে। তবে পৌরসভাগুলোতে বরাদ্দ কমেনি।

কার্ডধারী প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে, যা ঈদুল ফিতরের আগেই বিনা মূল্যে বিতরণ করার জন্য এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এ চাল উপজেলাগুলোর খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করে নিতে বলা হয়েছে।

যশোর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দারিদ্র্যের হারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ভিজিএফের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে গত বারের তুলনায় উপকারভোগীর সংখ্যা কমেছে। মোট বরাদ্দ কমলেও কোনো কোনো উপজেলায় বরাদ্দ বেড়েছে, আবার কোনো কোনো উপজেলায় বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যশোর জেলায় এক লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জন উপকারভোগীর জন্য বিনা মূল্যের ১০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বারের চেয়ে যশোরের ৮ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ হাজার ৫৭২ জন উপকারভোগী কমেছে ঝিকরগাছা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে। এ বছর ইউনিয়নগুলোতে ১৫ হাজার ১৯৩ জন উপকারভোগী বিনা মূল্যের ১০ কেজি চাল পাবেন। অপর দিকে, যশোর সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে এ বছর বরাদ্দ বেড়েছে ৮ হাজার ৩৯১ জন উপকারভোগী। এই উপজেলায় এ বছর উপকারভোগী ৩১ হাজার ২৬৪ জন।

এ ছাড়া চৌগাছা উপজেলায় এ বছর ১২ হাজার ৪৩৯ জন উপকারভোগী বিনা মূল্যের ১০ কেজি চাল পাবেন। গত বছর এই উপজেলার ১১ ইউনিয়নে উপকারভোগী ছিল ৪৬ হাজার ৭৩৫ জন। এই উপজেলায় উপকারভোগী কমেছে ৩৪ হাজার ২৯৬ জন।

মনিরামপুর উপজেলায় এ বছর উপকারভোগী ২৯ হাজার ৬৮৮ জন। গত বছর উপকারভোগী ছিলেন ৬৩ হাজার ৭৬২ জন। এই উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে উপকারভোগী কমেছে ৩৪ হাজার ৭৪ জন। কেশবপুর উপজেলায় এ বছর উপকারভোগী ১৬ হাজার ৯১৬ জন। গত বছর ছিলেন ১৫ হাজার ১৩০ জন। এ বছর উপজেলাটির ১১ ইউনিয়নে উপকারভোগী বেড়েছে ১ হাজার ৭৮৬ জন। শার্শা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে এ বছর উপকারভোগী ২৩ হাজার ৫৫২ জন। গত বছর উপকারভোগীর সংখ্যা ছিলেন ২০ হাজার ১৭০ জন। এ বছর উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩৮২ জন। বাঘারপাড়া উপজেলায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৩২৯ জন। গত বছর উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ছিলেন ১০ হাজার ৫৭৭ জন। এ বছর উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার ৭৫২ জন। এ ছাড়া অভয়নগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৯ হাজার ৬৪ জনকে এই ১০ কেজি করে চাল বিনা মূল্যে দেওয়া হবে।

অপর দিকে, যশোর, কেশবপুর, বেনাপোল, নওয়াপাড়া ও মনিরামপুর পৌরসভার প্রত্যেক উপজেলায় ৪ হাজার ৬২১ জন করে, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা পৌরসভার প্রত্যেকটিতে ৩ হাজার ৮১ জন করে এবং বাঘারপাড়া পৌরসভার এক হাজার ৫৪০ জন সুবিধাভোগী পাবেন এ ১০ কেজি করে চাল।

এ বিষয়ে চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে গত ঈদেও ৪ হাজার ২৮৯ জনকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়েছিল। এবার সেখানে মাত্র এক হাজার ১৪২ জনকে দেওয়ার জন্য বরাদ্দ এসেছে। ফলে এই চাল বিতরণে সমস্যার সৃষ্টি হবে।’

চৌগাছার হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, ‘গত ঈদে আমার ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫০৫ জনকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়েছিল। এবার মাত্র ১ হাজার ১৯৮ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গতবারের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ।’

মাসুদুল হাসান আরও বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে সাড়ে ৪ হাজার জনকে চাল দেওয়ার পরও পাওয়ার মতো অনেকেই থেকে যেতেন। এবার এত কম বরাদ্দে চাল বিতরণ করতে সমস্যায় পড়তে হবে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর দারিদ্র্যের হারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ভিজিএফের চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে গত বারের তুলনায় উপকারভোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে মোট বরাদ্দ কমলেও কোনো কোনো উপজেলায় বরাদ্দ বেড়েছে, আবার কোনো কোনো উপজেলায় বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।’

মুহম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের আগেই বিনা মূল্যে ১০ কেজি চাল উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা তালিকা করে এ চাল বিতরণ করবে।’