Ajker Patrika

কদর বাড়ছে লাল চিনির

সেলিম হোসাইন, ফুলবাড়িয়া
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ২৩
কদর বাড়ছে লাল চিনির

ফুলবাড়িয়া অঞ্চলের হাতে তৈরি লাল চিনির সারা দেশে পরিচিতি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হওয়ায় এই চিনির কদর ক্রমেই বাড়ছে। লাল চিনি তৈরি করা হয় আখ থেকে। এ কারণে আখ চাষও বেড়েছে ফুলবাড়িয়ায়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আখের রস জালিয়ে দিয়ে লাল চিনি তৈরি করা হয়। আমন ধান কাটার পর চাষিরা লাল চিনি তৈরি শুরু করেন। পৌষ মাস থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত আখমাড়াই ও লাল চিনি তৈরির কাজ চলে। মাড়াইয়ের পূর্বে চাষিরা লাল চিনি তৈরির জ্বাল ঘর তৈরি করেন।

লাল চিনি তৈরির জন্য প্রথমে আখমাড়াইয়ের মাধ্যমে রস বের করা হয়। পরে জ্বাল ঘরে চুলায় দেওয়া লোহার বড় কড়াইয়ে রস জ্বাল দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ঘন গরম সর নামিয়ে পাত্রে কাঠের তৈরি হাতল দিয়ে দ্রুত ঘর্ষণ দিলে তা লাল দানায় রূপ নেয়।

কৃষকেরা জানা, প্রতি কাঠা জমির আখ থেকে ৪৫ থেকে ৫০ টিন আখের রস হয়। প্রতি টিনে কাঁচা রস হয় ১৫ থেকে ১৬ কেজি। ১ টিন রস থেকে লাল চিনি পাওয়া যায় ৫ থেকে ৬ কেজি। হাতে তৈরি এই লাল চিনি রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাল চিনি দিয়ে বানানো পিঠা, নাড়ু, মোয়া, ক্ষীর, মিঠাই খেতে বেশ সুস্বাদু। ফুলবাড়িয়ায় নতুন জামাইকে লাল চিনির গরম ক্ষীর ও মোয়া দিয়ে আপ্যায়ন করার রেওয়াজ রয়েছ। মুড়ি, চিড়া, আটার রুটি সঙ্গে সকালের নাশতায় লাল চিনি ব্যবহার করা হয় অনেক এলাকায়।

সেমাই-সুজি, বাতাসা, জিলাপি, খোরমা, আচার তৈরির কাজেও লাল চিনি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে লাল চিনি ব্যবহার হয়। ঘরে কাচের বয়ামে ভরে মাসের পর মাস এটি সংরক্ষণ করা হয় বলে জানা গেছে।

পলাশতলী গ্রামের কৃষক মো. শামছু উদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় আমি এখনো আখ চাষ করে লাল চিনি তৈরি করি। তবে সার ও চারার বাড়তি মূল্য, উচ্চ পারিশ্রমিক, মাড়াইয়ের সমস্যাসহ চাষিদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি না থাকায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। ঐতিহ্যবাহী এই কৃষিপণ্যের সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে কৃষকদের উৎসাহিত করা উচিত।’

জানা গেছে, হাতে তৈরি লাল চিনির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এই চিনির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। লাল চিনির পুষ্টিমান এবং বাড়তি স্বাদের কারণেই এর চাহিদা ও মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয় চিকিৎসক হারুন আল মাকসুদ বলেন, ‘লাল চিনি শুধু মজাদারই নয়, স্বাস্থ্য সম্মত। এই চিনির মোলাসেস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এতে বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘আখ চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। উপজেলায় এক হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৮০ হেক্টর। এ বছর চিনির দামও বেশি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত